Posts

Showing posts with the label বাংলাদেশ

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

 পর্ব ৩ ই-ভোটিং: বাংলাদেশের প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ "যদি ১ কোটি প্রবাসী ভোট দিতে পারত, তাহলে বাংলাদেশ আজ কেমন হতো?" ভূমিকা ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি দেশের উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ডিজিটাল হওয়া, পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন ও ট্র্যাকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রসার—সবকিছুই ডিজিটাল রূপান্তরের সাফল্য। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে: প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ই-ভোটিং কি হতে পারে ভবিষ্যতের সমাধান? ই-ভোটিং শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, দেশের ভেতরেও ভোটের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ বাড়াতে পারে। তবে এটির সঠিক প্রয়োগ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। বিশ্বজুড়ে প্রবাসীদের ভোটদানের প্রধান পদ্ধতিগুলো: 1. 📨 পোস্টাল ভোট (Postal Voting) পদ্ধতি: ভোটাররা ডাকযোগে ব্যালট পেপার গ্রহণ ও পাঠান। কার্যকারিতা: নিরাপদ ও তুলনামূলকভাবে কম প্রযুক্তিনির্ভর। পুরনো ও পরীক্ষিত পদ্ধতি, অনেক দেশে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত। ব্যবহার করে: যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড। 2. 🌐 ইলেকট্রনিক ভোট (Internet Voting / i-Voting) পদ্ধতি: ভ...

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

পর্ব ২  বিশ্বে প্রবাসী ভোটাধিকার: সফল উদাহরণ ও বাংলাদেশে সম্ভাবনা "প্রায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী—তাদের কি কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার নেই?” বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি দেশে প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ফিলিপাইন, মেক্সিকো—সবাই প্রবাসীদের ভোটের আওতায় এনেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী বাধা? এই ধারাবাহিক লেখায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ। ভূমিকা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তাদের প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। কিন্তু রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, বিশেষ করে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে দেশভেদে পার্থক্য স্পষ্ট। উন্নত দেশগুলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নতুন প্রযুক্তি এবং নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অথচ বাংলাদেশে এই প্রশ্নটি এখনও আলোচিত ও বিতর্কিত। এই লেখায় আমরা দেখব কিভাবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ দিয়েছে, কোন মডেলগুলো সফল হয়েছে, এবং বাংলাদেশ এ থেকে কী শিখতে পারে। ভারতের ডাকযোগে ভোট ব্যবস্থা ভারতীয় প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ডাকযোগে ভোট একটি কার্যকর ব্যবস...

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

পর্ব ১ প্রবাসীদের ভোটাধিকার: চ্যালেঞ্জ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা "যারা রেমিট্যান্সে দেশ চালায়, তারাই কেন ভোটে অংশ নিতে পারে না?” ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তার পেছনে দেশের প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষের অবদান অসামান্য। তারা বিদেশের মাটিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করছে। শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, দেশের উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন, এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিতেও তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে—প্রবাসীরা কি তাদের ভোটাধিকার কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারছে? বাংলাদেশের প্রবাসীদের জন্য ভোটদান পদ্ধতি এখনও সীমাবদ্ধ ও জটিল, যা আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রবাসী ভোটাধিকার: বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও এই অধিকার বাতিল হয়নি, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে প্রবাসীরা যদি জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) রাখে এবং ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে, তবে দেশে এসে ভোট দ...

স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে আলোর পথে

পর্ব ৩: স্বৈরশাসনের পর গণতন্ত্রের সফল রূপান্তর: বিশ্ব থেকে শিক্ষা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা। পাঠকের প্রশ্ন:  “একবার স্বৈরশাসকের পতন হলে রাষ্ট্র কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে? আর বাংলাদেশ কি পারবে এই দুর্বৃত্ত চক্র থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে?" 🔶 ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় সামরিক হস্তক্ষেপ, স্বৈরশাসনের জুজু এবং গণতন্ত্রের মুখোশে একচ্ছত্র আধিপত্য বারবার জাতিকে পেছনে টেনেছে। বারবার স্বৈরশাসক পতনের পরও আমরা স্থায়ী সংস্কারমুখী রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। প্রশ্ন উঠছে— বাংলাদেশ কি কোনো বিকল্প পথে যেতে পারত? এবং এখন— আমরা কীভাবে উত্তরণের দিকে যেতে পারি? এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো: সফলভাবে স্বৈরশাসন-পরবর্তী পুনর্গঠনের দেশগুলো থেকে শিক্ষা ব্যর্থ রাষ্ট্রগঠনের বাস্তব উদাহরণ বাংলাদেশের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকনির্দেশন 🔹 বিশ্বে স্বৈরশাসন পরবর্তী সফল রূপান্তরের উদাহরণ: ১. চিলি: পিনোচেটের বিদায় ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন আগস্তো পিনোচেটের পতনের পর চিলিতে ধাপে ধাপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৯০ সালে  তার পতন ঘটলে  চিলি সফলভাবে সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে,একটি শক্তিশ...

স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে গণতন্ত্রের পথে: বাংলাদেশ ও বিশ্ব

📘 পর্ব ১: স্বৈরশাসকের পতনের পরে রাষ্ট্র পুনর্গঠন: বাংলাদেশ কেন বার বার  হোঁচট খায়? “একজন শাসকের পতনই কি যথেষ্ট? নাকি কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র বিনির্মিত হয়  জনগণের সম্মিলিত সংগ্রামে?” 🟦 পাঠকের প্রশ্ন: একজন স্বৈরাচারের বিদায় হলে  কি একটি জাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্ত হয়ে যায়? নাকি সত্যিকারের মুক্তির জন্য প্রয়োজন হয় আরও গভীর সংস্কার ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস? ১. ভূমিকা: শাসক নয়, শাসনের ধরনই আসল চ্যালেঞ্জ স্বৈরাচার পতনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভ্রান্তি হল—মানুষ ধরে নেয়, শাসক চলে গেলে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শাসক নয়, ব্যবস্থাটাই যদি অক্ষত থাকে, তাহলে শুধু মুখ বদলায়, দুঃশাসনের চেহারা বদলায় না। বাংলাদেশ বারবার সেই একই আবর্তে আটকে পড়ে—শাসক বদলায়, কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতির চরিত্র বদলায় না। ২. স্বৈরতন্ত্র: সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য স্বৈরতন্ত্র কোনো সাধারণ রাজনৈতিক মত নয়—এটি ব্যক্তিপূজার, ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের শাসনপ্রণালী। স্বৈরশাসক নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে: বিচারব্যবস্থাকে করায়ত্ত করে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে ব্যক্তিগত অস্ত্র বানায় গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করে নির...

বাংলাদেশের ম্যানহোল দুর্ঘটনা: অবহেলা, মৃত্যু এবং দায়দায়িত্বের সংকট

Image
ভূমিকা একটি শহর যখন নিজের বাসিন্দাদের প্রতি নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হয়, তখন সে শহর জীবন্ত মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় খোলা ও অপ্রতিষ্ঠিত ম্যানহোলের চিত্র এ কথার উজ্জ্বল প্রমাণ। প্রতিদিনই ঘটে যাচ্ছে এমন দুর্ঘটনা, যেখানে মানুষের জীবন যেন ব্যবহৃত হয় একটি অবহেলিত নান্দনিকতার বলি হিসেবে। ঢাকা, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটসহ বড় বড় শহরের রাস্তায় পড়ে থাকা এই অচিহ্নিত মৃত্যুর ফাঁদগুলো জনজীবনের সাথে আজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আর সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, এসব দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে প্রশাসনের অবহেলা ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি। এই লেখায় আমরা বাংলাদেশের ম্যানহোল দুর্ঘটনার ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরব, দেখাবো কোথায় কোথায় সরকারি অব্যবস্থাপনা চলছে, কী নাটক সাজানো হচ্ছে, এবং উন্নত দেশের আধুনিক ব্যবস্থা থেকে কি শিক্ষা নেয়া যায় তা আলোচনা করব। ১. ম্যানহোল দুর্ঘটনার ভয়াবহ ঘটনা ও নামকরা উদাহরণ ১.১ টঙ্গীর ফাতেমা বেগম: ৩৬ ঘণ্টা মৃত্যুর গ্লানি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে টঙ্গী শহরের এক ভেজা রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন ফাতেমা বেগম, ৪২ বছর বয়সী এক গৃহিণী। হঠাৎ তার পা পড়ে যায় এক খোলা ম্যানহোল...

জুলাই ঘোষণাপত্র: একটি জাতির সংকল্প ও বৈশ্বিক অনুরণন

পর্ব : ২   জুলাই ঘোষণাপত্র ও গণতন্ত্রের পথরেখা: বাস্তবায়ন, প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা “একটি দলিল শুধু কাগজে লেখা কিছু  অক্ষর নয়, বরং একটি জাতির লিখিত ইতিহাস । কিন্তু এই অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে কিভাবে?” ২০২৪ সালের জুলাই ঘোষণাপত্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই পর্বে আমরা বিশ্লেষণ করব ঘোষণার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক ও জনগণের প্রতিক্রিয়া, এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কীভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতি জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ ছিল না। রাজনৈতিক বিভাজন, প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা ও মতবিরোধ প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যেমন নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করা, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনতা প্রদানে উদ্যোগ নেওয়া। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম সরকারকে নজরদারি করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অনেক নাগরিক উদ্যোগ ও সংগঠন নির্বাচনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কিছু  রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘোষণাটিকে “রা...

বাংলাদেশে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণের নতুন অধ্যায় – জাতিসংঘ অফিসের প্রস্তাব কী নির্দেশ করে।

Image
পর্ব ২:  "জাতিসংঘের OHCHR অফিস ঢাকায়: বিদেশি হস্তক্ষেপ, নাকি মানবাধিকারের যুগান্তকারী সুযোগ?” “কোথায় সফল, কোথায় ব্যর্থ—জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থাপনের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও তা থেকে বাংলাদেশের করণীয় শিক্ষা” “আপনার দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে কে আপনার পাশে দাঁড়াবে? জাতিসংঘ কি কেবল পর্যবেক্ষক, না কি পরিবর্তনের কারিগর?” 🔎 জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (OHCHR) শুধুই একটি মনিটরিং সেল নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি দেশের ন্যায়বিচার ও মানবিক উন্নয়নের সূচক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ অফিস কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কোথায় বিরোধিতা এসেছে, কোথায় সাফল্য, এবং বাংলাদেশে এমন একটি অফিস স্থাপনের বাস্তবতা ও প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে—এই পর্বে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বর্তমান বাক্য: "OHCHR বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করে, প্রতিবেদন দেয়, প্রয়োজনে পরামর্শ ও সহযোগিতাও করে। তবে অনেক দেশের সরকার ও জনগণ এটিকে ‘সার্বভৌমত্বে বাধা’ হিসেবে দেখে, বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক চাপ তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে সংঘর্ষে প্রবেশ করে।" 🌍 জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস: কোন কোন দেশে আছে? জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস-এর (...

জুলাই ঘোষণাপত্র: একটি জাতির সংকল্প ও বৈশ্বিক অনুরণন

 পর্ব: ১  “যখন একটি জাতি নিঃশব্দে ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তার হৃদয় কথা বলে—ঘোষণার মাধ্যমে, জেগে ওঠার মাধ্যমে। জুলাই ২০২৪-এর ঘোষণা কি আমাদের সেই জাতিগত জাগরণ?” ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে একটি ঐতিহাসিক দলিল—‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এটি শুধু একটি বিবৃতি নয়, বরং একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যা দেশের জনগণের অন্তর্নিহিত চেতনার প্রতিফলন। এই পর্বে আমরা জানব, কেন এই ঘোষণাটি জরুরি ছিল, এর পটভূমি কী, এবং এটি কিভাবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বহন করে। সূচনা:  বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক সংকটময় অধ্যায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে অনেক বাঁধা পেরিয়েছে। নানা সময়ে নির্বাচন, সরকারের পরিবর্তন, রাজনৈতিক সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে দেশের গণতন্ত্র অস্থিতিশীল অবস্থায় পড়ে। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অবিশ্বাস ও হতাশার বাতাস বইতে থাকে। সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় একপ্রকার হতাশ। এমন প্রেক্ষাপটে, জুলাই ২০২৪ সালে একটি দলিল ঘোষণা করা হয়, যা নানা সামাজি...

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: একটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার বিবরণ

 পর্ব ৩:  পাঠকের প্রশ্ন: কেন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় দুর্ঘটনার শিকার কেউ মিনিটের মধ্যে ট্রমা কেয়ার পায়, অথচ আমাদের দেশে সোনারগাঁও থেকে ঢাকায় আসতেই ঘণ্টা লাগে? বাংলাদেশ কি কখনো সেই মানের জরুরি চিকিৎসা সেবা তৈরি করতে পারবে? "একটি দুর্ঘটনা। সময় গড়িয়ে যায় মিনিটে মিনিটে। হাসপাতাল ১০০ কিলোমিটার দূরে—আর জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কেবল একটাই প্রশ্ন: যদি এখনই পৌঁছানো যেত?" যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এই মুহূর্তেই আকাশপথে উড়ে আসে হেলিকপ্টার—মেডিকেল টিমসহ। আর আমাদের দেশে? স্রেফ এক মিনিট দেরি—আর তাতেই বদলে যেতে পারে কারও পুরো জীবন। উন্নত বিশ্বে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়, হেলিকপ্টার-ভিত্তিক মেডিকেল সার্ভিস বহু প্রাণ রক্ষা করছে প্রতিদিন। দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, হৃদরোগ—সব জরুরি অবস্থায় এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যায় ঠিক সময়মতো। বাংলাদেশে এমন ব্যবস্থা কতটা জরুরি? আর কেন আমাদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার এই দিকটি নিয়ে ভাবা দরকার এখনই? এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বাস্তবতা, প্রয়োজন এবং আমাদের সামর্থ্য—একটি মানবিক, জরুরি দৃষ্টিকোণ থেকে।" যুক্তরাষ্ট্রের (USA)জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা (EMS) যুক্ত...

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: একটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার বিবরণ

পর্ব:  ১  ভয়াবহ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা: বাংলাদেশের অবহেলা ও বাস্তবতা এক ভয়াবহ দুপুরের গল্প ২০২৫ সালের ২১ জুলাই, ঢাকার উত্তরা মিলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যেমন অন্য দিনের মতো ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছিল, তেমনি বাইরে ছিল এক ভয়াল দৃশ্য। আকাশে টেকঅফের কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত হয়। কয়েক মুহূর্তেই ক্লাসরুম ভরে যায় আগুনের লেলিহান শিখা, ধোঁয়ার কালো মেঘ, এবং আতঙ্কের চিৎকারে। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি ঘটে, আহত হয় ৮০ জনেরও বেশি। এমন ঘটনা কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়—এটি দেশের বিমান নিরাপত্তা এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যর্থতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। পুরনো বিমান ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি: অজুহাত না বাস্তবতা? দুর্ঘটনায় জড়িত বিমানটি ছিল চীনা তৈরি F-7 BGI, যা ২০১১ সালে বাংলাদেশের ফ্লিটে যুক্ত হয়। এটি তুলনামূলক নতুন হলেও, সাধারণ জনগণের মধ্যে ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে বিমানটি ১৯৭৬ সালের পুরনো মডেলের উন্নত সংস্করণ। প্রকৃতপক্ষে, F-7 এর প্রথম মডেল ষাটের দশকের...

বাংলাদেশে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণের নতুন অধ্যায় – জাতিসংঘ অফিসের প্রস্তাব কী নির্দেশ করে।

Image
পর্ব : ১  🟩  "যদি ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলে, তাহলে কি সত্যিই আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি বদলাবে, নাকি এটি হবে আরেকটি আন্তর্জাতিক চোখ রাঙানির কৌশল?" 🟦  জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের (OHCHR) ঢাকায় অফিস খোলার প্রস্তাব ঘিরে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক মহল, নাগরিক সমাজ এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে। কেউ একে মানবাধিকার রক্ষার যুগান্তকারী সম্ভাবনা মনে করছেন, কেউ আবার আশঙ্কা করছেন এটি হবে বিদেশি হস্তক্ষেপের আরেকটি দরজা। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের অফিস (OHCHR) এই প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে—OHCHR কী, কেন এটি বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে, এবং আমাদের জন্য এটি কতটা সুযোগ কিংবা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মানবাধিকার সুনাম এবং LDC থেকে উত্তরণ—সবই জড়িত এই আলোচনায়। পাঠকের প্রশ্ন: আপনার মতে, OHCHR অফিস ঢাকায় হলে কি সত্যিই মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হবে, নাকি এটি বিদেশি প্রভাবের একটি কৌশল মাত্র? সাবটাইটেল "জাতিসংঘের OHCHR অফিস ঢাকায়: বিদেশি হস্তক্ষেপ, নাকি মানবাধিকারের যুগান্তকারী সুযোগ?" ভূমিকা সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (OHCHR) ঢাক...

বাংলাদেশের বর্তমান মনোনয়ন পদ্ধতি – সমস্যা ও বিতর্ক

পর্ব ১ ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে মনোনয়ন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক আজ নতুন নয়। দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দলীয় মনোনয়ন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই মনোনয়ন কতটা গণতান্ত্রিক? দলের নীতিনির্ধারকরা যে প্রার্থী নির্বাচন করেন, তা কতটা জনগণের প্রকৃত পছন্দকে প্রতিফলিত করে? অনেকের মতে, বর্তমান মনোনয়ন পদ্ধতিতে দলীয় প্রভাব, অর্থবিত্ত এবং ব্যক্তিগত আনুগত্যের ভূমিকা এতটাই প্রবল যে জনগণের আসল প্রতিনিধি নির্বাচন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশের বর্তমান মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং এর মূল সমস্যাগুলো আলোচনা করব। বাংলাদেশের বর্তমান মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোতে সাধারণত প্রার্থী বাছাইয়ের পুরো ক্ষমতা থাকে দলীয় উচ্চপর্যায়ের হাতে। ক্ষমতাসীন বা প্রধান বিরোধী দল—উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, মনোনয়ন চূড়ান্ত হয় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কর্মীদের মতামত থাকলেও তা খুব কমই প্রভাব ফেলে। বর্তমান প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য: 1. কেন্দ্রভিত্তিক সিদ্ধান্ত: দলীয় সভানেত্রী বা সভাপতি প্রায় এককভাবে প্রার্থী মনোনীত করেন। 2. অর্থবল ও প্রভ...

স্পেশাল পর্ব: পিআর বনাম না ভোট – গণতন্ত্রে ভোটারের শেষ কথা”

🔷 শেষ  পর্ন 🔵 সাবটাইটেল: পিআর ভোটকে মর্যাদা দেয়, না ভোট ভোটারের মনের প্রতিবাদকে মর্যাদা দেয়। বাংলাদেশ যদি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালু করে, তাহলে কি না ভোটের দরকার থাকবে? কোন দেশে কীভাবে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে, আর আমাদের জন্য এর শিক্ষাই বা কী? মূল লেখা ১. না ভোটের জন্মকথা: কেন দরকার হলো? ভোট মানেই পছন্দের প্রার্থী বা দলকে বেছে নেওয়া—এই ধারণা ছিল প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অনেক সময় ভোটার প্রার্থী বা দল কারও প্রতিই আস্থা রাখতে পারে না। তখন ভোটারদের সামনে থাকত দুটি অপশন: ভোট না দেওয়া অথবা না চাইলেও কাউকে বেছে নেওয়া এই অসন্তোষ প্রকাশের জন্য অনেক দেশে শুরু হলো “না ভোট” (NOTA – None of the Above) ব্যবস্থা। এর মূল লক্ষ্য: ভোটারকে প্রতিবাদের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া। 📌 ভারতীয় উদাহরণ: ২০১৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ইভিএমে NOTA বোতাম যোগ করা হয়। আদালত বলেছিল: “না ভোটের অধিকার গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য, যাতে ভোটাররা স্বচ্ছভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে।” 📌 যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা: সেখানে অফিসিয়ালি ব্যালটে লেখা থাকে “None of These Candidates”, যা অনেক ভোটার ব্যবহার করেন। 📌 ...

পিআর চালুর বাস্তব রোডম্যাপ: বাংলাদেশে পরবর্তী ৫ বছরে কীভাবে শুরু করা সম্ভব?”

 🔷 পর্ব ৮:  🔵 সাবটাইটেল: পিআর (Proportional Representation) শুধু তাত্ত্বিক চিন্তা নয়—সঠিক পরিকল্পনা ও ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এটি সম্ভব। এই পর্বে আমরা তুলে ধরবো, আগামী ৫ বছরে কীভাবে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে পিআর বাস্তবায়নের দিকে এগোতে পারে—সংলাপ থেকে শুরু করে আইন পাস, পাইলট প্রকল্প, প্রযুক্তি প্রস্তুতি এবং সর্বশেষ পূর্ণ বাস্তবায়ন। --- 🔶 ১. বছর ১: জাতীয় সংলাপ ও রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা ✅ প্রথম ধাপে যা প্রয়োজন: সংসদে আলোচনার সূচনা ইসি, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে জাতীয় সংলাপ একটি রোডম্যাপ কমিটি গঠন 📌 কাজ: সংবিধান ও RPO পর্যালোচনা করে প্রস্তাব প্রস্তুত 📌 উদাহরণ: কেনিয়ায় সংবিধান সংশোধনের আগে বছরব্যাপী গণশুনানি আয়োজন করা হয়। --- 🔶 ২. বছর ২: আইন প্রণয়ন ও সচেতনতা কার্যক্রম শুরু ✅ দ্বিতীয় বছরে যা করতে হবে: Representation of the People Order (RPO) সংশোধন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে অন্তর্ভুক্তিমূলকতা নিশ্চিত করা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পিআর শিক্ষা যুক্ত করা 📌 কাজ: জনপ্রিয় মিডিয়ায় শর্ট ভিডিও, অ্যানিমেশন, কলেজ পর্যায়ে ওয়ার্কশপ 📌 উদাহরণ: নেপালে ভোট সংস্কারের সময় বই, নাট...