Posts

Showing posts with the label ইন্দোনেশিয়া

তৃতীয় পর্ব : সুকর্ণো: ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার পিতা – এক বিপ্লবী নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক

Image
ইন্দোনেশিয়ার সাবেক সুকর্ণো জাভা দ্বীপের সবুজ পাথুরে পাহাড়ের মধ্যে, সমুদ্রের ঢেউয়ের ধ্বনিতে এক তরুণের কণ্ঠ যেন ভবিষ্যতের ডাক দিচ্ছিল। চোখে দীপ্তি, মননে দেশপ্রেম—এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা। তিনি ছিলেন সুকর্ণো, যিনি একটি স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী ইন্দোনেশিয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রিভিউ সুকর্ণো ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার সংগ্রামী নেতা এবং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন এক প্রখর চিন্তাবিদ, যিনি ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের কল্যাণ এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য রাজনীতি করতেন। ডাচ ঔপনিবেশিক শাসন ভেঙে স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার জন্য তার নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাকে এশিয়ার ইতিহাসের এক অমর ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। শৈশব ও পারিবারিক জীবন কিশোর সুকর্নো সুকর্ণো জন্মগ্রহণ করেন ১৯০১ সালের ৬ জুন, জাভার ছোট গ্রামে। তার পিতা একজন ডাচ ও জাভা সংস্কৃতির সংমিশ্রণে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, আর মাতা ছিলেন জাভানিজ মুসলিম পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় সুকর্ণো খুবই জ্ঞানপ্রিয়, চঞ্চল এবং কৌতূহলী। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সময় থেকেই তার নেতৃত্বগুণ প্রকটভাবে প্রকাশ পায...

মিশরের গণতন্ত্রের অপূর্ণ যাত্রা: কেন তা স্থায়ী হলো না?

Image
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি          কায়রোর তহরির স্কোয়ার—যেখানে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ একসাথে উচ্চারণ করেছিল তিনটি শব্দ—“রুটি, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার।” মনে হয়েছিল শতাব্দীর পুরনো স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আরব বসন্ত যেন মিশরের ইতিহাসে নতুন ভোরের সূচনা করেছিল। কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম। ভোরের আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল গহীন  অন্ধকারে। সামরিক বাহিনীর বুটের শব্দ আবার ফিরে এলো, আর গণতন্ত্র রয়ে গেল কেবল স্মৃতির পাতায়। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব— 1. মিশরে গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। 2. আরব বসন্ত এবং মিশরের গণতান্ত্রিক উত্তরণ। 3. কেন মিশরে গণতন্ত্র স্থায়ী হয়নি—সামরিক আধিপত্য, রাজনৈতিক বিভাজন, নাগরিক সমাজের দুর্বলতা, অর্থনৈতিক সংকট, এবং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির প্রভাব। 4. তুলনায় ইন্দোনেশিয়ার সাফল্য: কীভাবে তারা সংকট থেকে বেরিয়ে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। 5. উপসংহার: মিশরের অভিজ্ঞতা আমাদের কী শিক্ষা দেয় 🇮🇩🇮🇩 ১. মিশরের গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মিশর একসময় সভ্যতার আঁতুরঘর ছিল। নীলনদের তীরে গড়ে ওঠা সমাজ বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাষ্...

চতুর্থ পর্ব : বি জে হাবিবি এবং ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম

Image
বি জে হাবিবি "কখনও কখনও ইতিহাস এমন এক দরজা খোলে, যেখান দিয়ে জাতি প্রবেশ করে অন্ধকার থেকে আলোয়। ১৯৯৮ সালের ইন্দোনেশিয়া ছিল সেই মুহূর্তের সাক্ষী। সুহার্তোর দীর্ঘ তিন দশকের শাসন ভেঙে পড়ল, আর নেতৃত্বের ভার এসে পড়ল এমন একজন মানুষের হাতে, যিনি ছিলেন প্রকৌশলী, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং অপ্রস্তুত—কিন্তু ইতিহাস তাঁকে বেছে নিয়েছিল। তিনি ছিলেন বি. জে. হাবিবি, যিনি স্বল্প সময়ে হলেও ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্রের স্থপতি হয়ে ওঠেন। ১. স্বৈরশাসনের দীর্ঘ ছায়া: সুহার্তো ও “নতুন শাসন ব্যবস্থা” ১৯৬৭ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতির ওপর দাপট দেখিয়েছিলেন সুহার্তো। তাঁর শাসন ছিল “নিউ অর্ডার”—একটি সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল সীমিত, গণমাধ্যম ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে, আর রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত “Golkar”-এর ছায়াতলে আবদ্ধ। তবে সুহার্তো শুধু রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণেই থেমে থাকেননি। তিনি অর্থনীতিকে আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক পৃষ্ঠপোষকতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছিলেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সম্পদের বৈষম্য সমাজে গভীর ক্ষোভ তৈরি করেছিল। ১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট সেই ক্ষোভকে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। মুদ্রা...

দ্বিতীয় পর্ব : স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে আলোর পথে

 📘 পর্ব ২ বিশ্বে স্বৈরশাসক পতনের পর রাষ্ট্র পুনর্গঠন: ইতিহাস কী বলে? “যেখানে স্বৈরতন্ত্র ভেঙেছে, সেখানে কি সবকিছু বদলেছে? না কি শুধুই বদলেছে নেতৃত্বের নাম ও মুখ?” 🟦 পাঠকের প্রশ্ন: বিশ্বজুড়ে যেসব দেশে স্বৈরাচার পতন হয়েছে, তারা কীভাবে নিজেকে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করেছে? আর আমরা কেন সেখান থেকে শিক্ষা নিতে পারছি না।  ভূমিকা:  এক ব্যক্তির পতন, এক রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম? স্বৈরশাসকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই আশা করেন, রাষ্ট্র বদলে যাবে। নতুন রাষ্ট্র, নতুন শাসন, নতুন মূল্যবোধ। কিন্তু বাস্তবতা হলো—কোনো জাতির সংস্কার তখনই সফল হয়, যখন সেটি শুধু ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ঘটায়। এই পর্বে আমরা দেখব বিশ্বের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র কীভাবে স্বৈরাচারের পতনের পরে নিজেদের গড়ে তুলেছে—কারা সফল, কারা ব্যর্থ, আর কেন? ১. দক্ষিণ আফ্রিকা:  ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে মাফ নয়, পুনর্মিলন দীর্ঘ সময় ধরে বর্ণবাদের (Apartheid) শিকার দক্ষিণ আফ্রিকা এক সময় ছিল বিশ্বের অন্যতম বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্র। ১৯৯০-এর দশকে নেলসন ম্যান্ডেলা রাজনৈতিক বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে নেতৃত্ব দেন এক ঐতিহাসিক গঠন প্রক্রিয়...