Posts

চতুর্থ পর্ব : বাংলাদেশ : ১৯৯০ গণঅভুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তর এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা

Image
  বেগম খালেদা জিয়া  🔹 সূচনা: আবর্তিত নেতৃত্ব ও স্থিতিশীলতার অভাব ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর। দীর্ঘ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে—অবশেষে স্থায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই  মানুষের স্বপ্ন  ভেঙে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।  ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব দেশের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে আসেনি—বরং বারবার অবর্ত ঘূর্ণিপাকে আবর্তিত করেছে। তিন দলের নির্বাচনের রূপরেখা সংবিধানে সংযোজন না করা, মাগুরার উপ-নির্বাচনে আশ্রয় নেওয়া, রাজনৈতিক চুক্তি এবং অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম—এসব প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ছাত্র আন্দোলন, বিক্ষোভ এবং দীর্ঘ অসহযোগ আন্দোলন বারবার পুনরাবৃত্তি হতে হয়েছে। দেশের গণতন্ত্র স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি, বরং এক আন্দোলন থেকে আরেক আন্দোলনের আবর্তে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে নেতৃত্বের চরিত্র এবং প্রশাসনিক দক্ষতার সীমাবদ্ধতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে—যেখানে কার্যকর সংস্কার ও স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি না থাকলে ...

চতুর্থ পর্ব : বি জে হাবিবি এবং ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম

Image
বি জে হাবিবি "কখনও কখনও ইতিহাস এমন এক দরজা খোলে, যেখান দিয়ে জাতি প্রবেশ করে অন্ধকার থেকে আলোয়। ১৯৯৮ সালের ইন্দোনেশিয়া ছিল সেই মুহূর্তের সাক্ষী। সুহার্তোর দীর্ঘ তিন দশকের শাসন ভেঙে পড়ল, আর নেতৃত্বের ভার এসে পড়ল এমন একজন মানুষের হাতে, যিনি ছিলেন প্রকৌশলী, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং অপ্রস্তুত—কিন্তু ইতিহাস তাঁকে বেছে নিয়েছিল। তিনি ছিলেন বি. জে. হাবিবি, যিনি স্বল্প সময়ে হলেও ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্রের স্থপতি হয়ে ওঠেন। ১. স্বৈরশাসনের দীর্ঘ ছায়া: সুহার্তো ও “নতুন শাসন ব্যবস্থা” ১৯৬৭ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতির ওপর দাপট দেখিয়েছিলেন সুহার্তো। তাঁর শাসন ছিল “নিউ অর্ডার”—একটি সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল সীমিত, গণমাধ্যম ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে, আর রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত “Golkar”-এর ছায়াতলে আবদ্ধ। তবে সুহার্তো শুধু রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণেই থেমে থাকেননি। তিনি অর্থনীতিকে আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক পৃষ্ঠপোষকতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছিলেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সম্পদের বৈষম্য সমাজে গভীর ক্ষোভ তৈরি করেছিল। ১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট সেই ক্ষোভকে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। মুদ্রা...

তৃতীয় পর্ব : ভো নুয়েন গিয়াপ: ভিয়েতনামের যুদ্ধকৌশলজ্ঞ ও স্বাধীনতার নায়ক

Image
ভিয়েতনামের  স্বাধীনতার প্রধান  সামরিক  বিশেষজ্ঞ, ভো নুয়েন গিয়াপ একটি ছোট গ্রামের ছেলে, যার চোখে দেশপ্রেম এবং মননে অদম্য সাহস। তার কৌশল আর নেতৃত্বের জন্য ফরাসি ঔপনিবেশ এবং পরে আমেরিকান আগ্রাসন পর্যন্ত ভিয়েতনামকে স্বাধীনতার পথে এগোয়েছে। তিনি হলেন ভো নুয়েন গিয়াপ, এক সৈনিক ও কৌশলগত নেতা, যিনি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয়। প্রিভিউ ভো নুয়েন গিয়াপ (Võ Nguyên Giáp) ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার প্রধান সামরিক কৌশলজ্ঞ। তিনি হো চি মিনের বিশ্বাসপাত্র এবং ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। তার নেতৃত্ব, কৌশল এবং দৃঢ় মনোবল তাকে ২০ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এশিয়ান সামরিক নেতার মর্যাদা দিয়েছে। শৈশব ও পারিবারিক জীবন ভো নুয়েন গিয়াপ জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালের ২৫ আগস্ট, ভিয়েতনামের কুইনগিয়ান প্রদেশে। তার পিতা একজন স্থানীয় শিক্ষক ছিলেন এবং মাতা কৃষক পরিবারের প্রতিনিধি। ছোটবেলায় গিয়াপ কৌতূহলী, সাহসী ও ইতিহাসে আগ্রহী ছিলেন। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলে তিনি দেশ ও সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করেন। শৈশবে তিনি গ্রামীণ জীবন...

দ্বিতীয় পর্ব : হো চি মিন: ভিয়েতনামের স্বাধীনতার নেতা – এক বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক

Image
হো চি মিন,ভিয়েতনামের জাতির পিতা  মেকং নদীর তীরে ভোরের আলো যখন জলে ঝলমল করে, তখন এক যুবক রাস্তায় পা রাখে যেন দেশকে মুক্ত করার ডাক দিতে। চোখে দৃঢ়তা, মননে দেশপ্রেম—এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন ভিয়েতনামের জাতির পিতা। তিনি ছিলেন হো চি মিন, যিনি ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। হো চি মিন ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার সংগ্রামী নেতা, রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপতি। ফরাসি ও পরে আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার নিরলস সংগ্রাম তাকে ২০ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এশিয়ান নেতা করে তুলেছে। তার নেতৃত্ব শুধু সামরিক বা রাজনৈতিক নয়, এটি ছিল জনগণের মানসিক ও সাংস্কৃতিক উন্মেষেরও প্রতীক। শৈশব ও পারিবারিক জীবন হো চি মিন জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯০ সালের ১৯ মে, ভিয়েতনামের ন্যাংতান প্রদেশে। তার পিতা ছিলেন শিক্ষিত, নৈতিক ও দেশপ্রেমিক। মাতা ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। ছোটবেলায় হো চি মিন কৌতূহলী, বুদ্ধিমান এবং নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ ছিলেন। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সময় থেকেই তিনি মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, ন্যায়পরায়ণতা ও সামাজিক সচেতনতা ধারণ করেন। তিনি সা...

জোমো কেনিয়াট্টা: কেনিয়ার স্বাধীনতার জনক – এক বিপ্লবী নেতা ও জাতির পিতা

Image
            নেতা ও কেনিয়ার জাতির পিতা  কেনিয়ার প্রান্তর জুড়ে ভোরের প্রথম আলো যখন মাঠের ধানক্ষেতের সবুজের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন এক তরুণের পদচারণা যেন কেবল গ্রামের পথ নয়, বরং ইতিহাসের পথে। চোখে দীপ্তি, মননে দেশপ্রেম—এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন কেনিয়ার জাতির পিতা। তিনি ছিলেন জোমো কেনিয়াট্টা—যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী কেনিয়া। জোমো কেনিয়াট্টা ছিলেন কেনিয়ার স্বাধীনতার সংগ্রামী নেতা এবং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন এক বিপ্লবী চিন্তাবিদ, যিনি ক্ষমতা নয়, জনগণের কল্যাণকে সর্বাগ্রে রাখতেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভেঙে স্বাধীন কেনিয়ার জন্য তার নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাকে আফ্রিকান ইতিহাসের এক অমর ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। শৈশব ও পারিবারিক জীবন জোমো কেনিয়াট্টা জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২০ অক্টোবর, কেনিয়ার কিকুয়ু সম্প্রদায়ের একটি গ্রামে। তার পিতা কিকুয়ু সম্প্রদায়ের একজন স্থানীয় নেতা ছিলেন, কিন্তু পরিবারের জীবন ছিল অতি সরল ও স্বল্প সম্পদে সীমিত। ছোটবেলা থেকেই জোমো ছিলেন কৌতূহলী, প্রতিভাবান এবং তীক্ষ্ণ মনোযোগী।...

জুলিয়াস নিয়্যারারে: তানজানিয়ার ‘মওয়ালিমু’ – এক স্বপ্নবাজ শিক্ষক থেকে জাতির পিতা

Image
         জাতির পিতা জুলিয়াস কামবারাগে নিয়্যারারে দিগন্তজোড়া সাভানায় ভোরের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়ছে, গাছে গাছে পাখির কূজন। গ্রামীণ পথ ধরে হেঁটে চলেছেন এক তরুণ—হাতে বই, চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি। তার পদক্ষেপ শুধু স্কুলের দিকে নয়, যেন ইতিহাসের দিকে এগিয়ে চলা। তিনি জানেন না, একদিন তাকে ‘মওয়ালিমু’—শিক্ষক—হিসেবে নয়, বরং এক জাতির পিতা হিসেবেও স্মরণ করা হবে। এই মানুষটির নাম জুলিয়াস কামবারাগে নিয়্যারারে। জুলিয়াস নিয়্যারারে ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি ক্ষমতার মোহে নয়, বরং মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতেন। শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতার আন্দোলন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উজামা সমাজতন্ত্র—যার কেন্দ্রে ছিল ঐক্য, সমতা ও আত্মনির্ভরতা। আফ্রিকার স্বাধীনতার ইতিহাসে তার নাম উচ্চারিত হয় এক বিনয়ী বিপ্লবীর মতো, যিনি নিজের জাতিকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়ে আফ্রিকার ঐক্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শৈশব ও শিক্ষাজীবন ১৯২২ সালের ১৩ এপ্রিল, তানজানিয়ার বুথিয়ামা গ্রামে নিয়্যারারের জন্ম। লেক ভিক্টোরিয়ার তীরে অবস্থিত সেই গ্রাম ছিল প্রকৃতির শান্ত সৌন্দর্যে ঘেরা। তার পিতা ছিলেন একজন স...

এমির আব্দেল কাদের: মরুর সিংহ, শান্তির কবি

Image
"যুদ্ধের ময়দানে তিনি ছিলেন তলোয়ারের ঝলক, শান্তির প্রান্তরে ছিলেন করুণার জলধারা। আলজেরিয়ার মরুভূমি তাঁকে দিয়েছে সাহস, আর আকাশ দিয়েছে বিশ্বাস—সেই মানুষই এমির আব্দেল কাদের।" জন্ম ও শৈশব  ১৮০৮ সালের এক শীতল ভোর। আলজেরিয়ার গুটনা গ্রাম তখনও ঘুমের আস্তরণে ঢাকা। পূর্ব দিকের আকাশে রঙিন রেখা আঁকতে শুরু করেছে সূর্য, আর দূরে আটলাস পর্বতমালার চূড়াগুলো হালকা কুয়াশায় মোড়ানো। মরুভূমির বাতাসে ভেসে আসছে তাজা খেজুর পাতার গন্ধ, আর কোনো কোনো উটের ঘণ্টাধ্বনি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে।সেই ভোরেই, একটি মাটির ঘরের ভেতর এক শিশুর প্রথম কান্না ভেঙে দিল নিস্তব্ধতা। পিতা—শায়খ মহিউদ্দিন আল-হাসানি, দরবারের সুফি গুরু—চোখে জল নিয়ে তাকালেন ছোট্ট নবজাতকের দিকে। তিনি মৃদু স্বরে ফিসফিস করে বললেন:“"এ আল্লাহ, এই সন্তানকে জ্ঞান ও ন্যায়ের আলোয় ভরিয়ে দাও।”শিশুর মা, জাহরা, ক্লান্ত হলেও চোখে রাখলেন এক আশ্চর্য উজ্জ্বলতা। বাইরের বাতাসে হালকা ঠান্ডা, কিন্তু ঘরের ভেতর কুরআনের আয়াতের মৃদু ধ্বনি ছড়িয়ে দিচ্ছে উষ্ণতা।পিতা তাঁর কোলের শিশুটির নাম রাখলেন—আব্দুল কাদের। নামটির মধ্যে ছিল আভিজাত্য ও দায়িত্ব; যেন এক ভবিষ্যতের প্...