Posts

Showing posts from August, 2025

বি জে হাবিবি এবং ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম

Image
বি জে হাবিবি "কখনও কখনও ইতিহাস এমন এক দরজা খোলে, যেখান দিয়ে জাতি প্রবেশ করে অন্ধকার থেকে আলোয়। ১৯৯৮ সালের ইন্দোনেশিয়া ছিল সেই মুহূর্তের সাক্ষী। সুহার্তোর দীর্ঘ তিন দশকের শাসন ভেঙে পড়ল, আর নেতৃত্বের ভার এসে পড়ল এমন একজন মানুষের হাতে, যিনি ছিলেন প্রকৌশলী, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং অপ্রস্তুত—কিন্তু ইতিহাস তাঁকে বেছে নিয়েছিল। তিনি ছিলেন বি. জে. হাবিবি, যিনি স্বল্প সময়ে হলেও ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্রের স্থপতি হয়ে ওঠেন। ১. স্বৈরশাসনের দীর্ঘ ছায়া: সুহার্তো ও “নতুন শাসন ব্যবস্থা” ১৯৬৭ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতির ওপর দাপট দেখিয়েছিলেন সুহার্তো। তাঁর শাসন ছিল “নিউ অর্ডার”—একটি সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল সীমিত, গণমাধ্যম ছিল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে, আর রাজনৈতিক দলগুলো কার্যত “Golkar”-এর ছায়াতলে আবদ্ধ। তবে সুহার্তো শুধু রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণেই থেমে থাকেননি। তিনি অর্থনীতিকে আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক পৃষ্ঠপোষকতার কাঠামোয় বেঁধে ফেলেছিলেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সম্পদের বৈষম্য সমাজে গভীর ক্ষোভ তৈরি করেছিল। ১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট সেই ক্ষোভকে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। মুদ্রা...

ভো নুয়েন গিয়াপ: ভিয়েতনামের যুদ্ধকৌশলজ্ঞ ও স্বাধীনতার নায়ক

একটি ছোট গ্রামের ছেলে, যার চোখে দেশপ্রেম এবং মননে অদম্য সাহস। তার কৌশল আর নেতৃত্বের জন্য ফরাসি ঔপনিবেশ এবং পরে আমেরিকান আগ্রাসন পর্যন্ত ভিয়েতনামকে স্বাধীনতার পথে এগোয়েছে। তিনি হলেন ভো নুয়েন গিয়াপ, এক সৈনিক ও কৌশলগত নেতা, যিনি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয়। প্রিভিউ ভো নুয়েন গিয়াপ (Võ Nguyên Giáp) ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার প্রধান সামরিক কৌশলজ্ঞ। তিনি হো চি মিনের বিশ্বাসপাত্র এবং ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। তার নেতৃত্ব, কৌশল এবং দৃঢ় মনোবল তাকে ২০ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এশিয়ান সামরিক নেতার মর্যাদা দিয়েছে। শৈশব ও পারিবারিক জীবন ভো নুয়েন গিয়াপ জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালের ২৫ আগস্ট, ভিয়েতনামের কুইনগিয়ান প্রদেশে। তার পিতা একজন স্থানীয় শিক্ষক ছিলেন এবং মাতা কৃষক পরিবারের প্রতিনিধি। ছোটবেলায় গিয়াপ কৌতূহলী, সাহসী ও ইতিহাসে আগ্রহী ছিলেন। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলে তিনি দেশ ও সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করেন। শৈশবে তিনি গ্রামীণ জীবনের সংগ্রাম, কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দেখে মানসিক শক্তি অর্জন করেন। সেই...

হো চি মিন: ভিয়েতনামের স্বাধীনতার নেতা – এক বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক

মেকং নদীর তীরে ভোরের আলো যখন জলে ঝলমল করে, তখন এক যুবক রাস্তায় পা রাখে যেন দেশকে মুক্ত করার ডাক দিতে। চোখে দৃঢ়তা, মননে দেশপ্রেম—এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন ভিয়েতনামের জাতির পিতা। তিনি ছিলেন হো চি মিন, যিনি ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। হো চি মিন ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার সংগ্রামী নেতা, রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রপতি। ফরাসি ও পরে আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার নিরলস সংগ্রাম তাকে ২০ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এশিয়ান নেতা করে তুলেছে। তার নেতৃত্ব শুধু সামরিক বা রাজনৈতিক নয়, এটি ছিল জনগণের মানসিক ও সাংস্কৃতিক উন্মেষেরও প্রতীক। শৈশব ও পারিবারিক জীবন হো চি মিন জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯০ সালের ১৯ মে, ভিয়েতনামের ন্যাংতান প্রদেশে। তার পিতা ছিলেন শিক্ষিত, নৈতিক ও দেশপ্রেমিক। মাতা ছিলেন ধর্মনিষ্ঠ এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। ছোটবেলায় হো চি মিন কৌতূহলী, বুদ্ধিমান এবং নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ ছিলেন। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সময় থেকেই তিনি মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ, ন্যায়পরায়ণতা ও সামাজিক সচেতনতা ধারণ করেন। তিনি সাধারণ কৃষক, শ্রমিক এবং গ্রামের মানুষের ...

জোমো কেনিয়াট্টা: কেনিয়ার স্বাধীনতার জনক – এক বিপ্লবী নেতা ও জাতির পিতা

Image
            নেতা ও কেনিয়ার জাতির পিতা  কেনিয়ার প্রান্তর জুড়ে ভোরের প্রথম আলো যখন মাঠের ধানক্ষেতের সবুজের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন এক তরুণের পদচারণা যেন কেবল গ্রামের পথ নয়, বরং ইতিহাসের পথে। চোখে দীপ্তি, মননে দেশপ্রেম—এই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন কেনিয়ার জাতির পিতা। তিনি ছিলেন জোমো কেনিয়াট্টা—যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী কেনিয়া। জোমো কেনিয়াট্টা ছিলেন কেনিয়ার স্বাধীনতার সংগ্রামী নেতা এবং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন এক বিপ্লবী চিন্তাবিদ, যিনি ক্ষমতা নয়, জনগণের কল্যাণকে সর্বাগ্রে রাখতেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ভেঙে স্বাধীন কেনিয়ার জন্য তার নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাকে আফ্রিকান ইতিহাসের এক অমর ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। শৈশব ও পারিবারিক জীবন জোমো কেনিয়াট্টা জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২০ অক্টোবর, কেনিয়ার কিকুয়ু সম্প্রদায়ের একটি গ্রামে। তার পিতা কিকুয়ু সম্প্রদায়ের একজন স্থানীয় নেতা ছিলেন, কিন্তু পরিবারের জীবন ছিল অতি সরল ও স্বল্প সম্পদে সীমিত। ছোটবেলা থেকেই জোমো ছিলেন কৌতূহলী, প্রতিভাবান এবং তীক্ষ্ণ মনোযোগী।...

জুলিয়াস নিয়্যারারে: তানজানিয়ার ‘মওয়ালিমু’ – এক স্বপ্নবাজ শিক্ষক থেকে জাতির পিতা

Image
         জাতির পিতা জুলিয়াস কামবারাগে নিয়্যারারে দিগন্তজোড়া সাভানায় ভোরের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়ছে, গাছে গাছে পাখির কূজন। গ্রামীণ পথ ধরে হেঁটে চলেছেন এক তরুণ—হাতে বই, চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি। তার পদক্ষেপ শুধু স্কুলের দিকে নয়, যেন ইতিহাসের দিকে এগিয়ে চলা। তিনি জানেন না, একদিন তাকে ‘মওয়ালিমু’—শিক্ষক—হিসেবে নয়, বরং এক জাতির পিতা হিসেবেও স্মরণ করা হবে। এই মানুষটির নাম জুলিয়াস কামবারাগে নিয়্যারারে। জুলিয়াস নিয়্যারারে ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি ক্ষমতার মোহে নয়, বরং মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতেন। শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতার আন্দোলন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উজামা সমাজতন্ত্র—যার কেন্দ্রে ছিল ঐক্য, সমতা ও আত্মনির্ভরতা। আফ্রিকার স্বাধীনতার ইতিহাসে তার নাম উচ্চারিত হয় এক বিনয়ী বিপ্লবীর মতো, যিনি নিজের জাতিকে স্বাধীনতার পথে নেতৃত্ব দিয়ে আফ্রিকার ঐক্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শৈশব ও শিক্ষাজীবন ১৯২২ সালের ১৩ এপ্রিল, তানজানিয়ার বুথিয়ামা গ্রামে নিয়্যারারের জন্ম। লেক ভিক্টোরিয়ার তীরে অবস্থিত সেই গ্রাম ছিল প্রকৃতির শান্ত সৌন্দর্যে ঘেরা। তার পিতা ছিলেন একজন স...

এমির আব্দেল কাদের: মরুর সিংহ, শান্তির কবি

Image
"যুদ্ধের ময়দানে তিনি ছিলেন তলোয়ারের ঝলক, শান্তির প্রান্তরে ছিলেন করুণার জলধারা। আলজেরিয়ার মরুভূমি তাঁকে দিয়েছে সাহস, আর আকাশ দিয়েছে বিশ্বাস—সেই মানুষই এমির আব্দেল কাদের।" জন্ম ও শৈশব  ১৮০৮ সালের এক শীতল ভোর। আলজেরিয়ার গুটনা গ্রাম তখনও ঘুমের আস্তরণে ঢাকা। পূর্ব দিকের আকাশে রঙিন রেখা আঁকতে শুরু করেছে সূর্য, আর দূরে আটলাস পর্বতমালার চূড়াগুলো হালকা কুয়াশায় মোড়ানো। মরুভূমির বাতাসে ভেসে আসছে তাজা খেজুর পাতার গন্ধ, আর কোনো কোনো উটের ঘণ্টাধ্বনি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। সেই ভোরেই, একটি মাটির ঘরের ভেতর এক শিশুর প্রথম কান্না ভেঙে দিল নিস্তব্ধতা। পিতা—শায়খ মহিউদ্দিন আল-হাসানি, দরবারের সুফি গুরু—চোখে জল নিয়ে তাকালেন ছোট্ট নবজাতকের দিকে। তিনি মৃদু স্বরে ফিসফিস করে বললেন:“ "এ আল্লাহ, এই সন্তানকে জ্ঞান ও ন্যায়ের আলোয় ভরিয়ে দাও।” শিশুর মা, জাহরা, ক্লান্ত হলেও চোখে রাখলেন এক আশ্চর্য উজ্জ্বলতা। বাইরের বাতাসে হালকা ঠান্ডা, কিন্তু ঘরের ভেতর কুরআনের আয়াতের মৃদু ধ্বনি ছড়িয়ে দিচ্ছে উষ্ণতা। পিতা তাঁর কোলের শিশুটির নাম রাখলেন—আব্দুল কাদের। নামটির মধ্যে ছিল আভিজাত্য ও দায়িত্ব; যেন এক ভবিষ্যতে...

ক্‌ওয়ামে নক্রুমা: আফ্রিকার স্বাধীনতার দীপ্তমান নক্ষত্র

Image
"যদি আফ্রিকা জাগে, তবে বিশ্ব কেঁপে উঠবে" — এই একটি বাক্য যেন একদিন সত্যি হয়ে উঠেছিল ক্‌ওয়ামে নক্রুমার জীবনে। আফ্রিকার অন্তরে জন্ম নিয়ে, প্রবাসের আলো-ছায়ায় বেড়ে উঠে, তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন এক মহাদেশের—যেখানে দাসত্বের শিকল চিরদিনের জন্য ছিঁড়ে যাবে, মানুষ হবে মুক্ত, আর পতাকা শুধু দেশের নয়, আত্মমর্যাদার প্রতীক হবে। এই রচনাটি কেবল ইতিহাস নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার পথনির্দেশিকা। যারা নেতৃত্ব, আত্মত্যাগ এবং সামাজিক পরিবর্তনের গুরুত্ব বুঝতে চান, তাদের জন্য নক্রুমার জীবন এক জীবন্ত পাঠশালা। পাঠকের প্রশ্ন আপনি কি মনে করেন, আজকের বিশ্বে নক্রুমার মতো ঐক্যের ডাক দেওয়া নেতার প্রয়োজন আছে? কেন? প্রারম্ভিকা প্রতিটি জাতির ইতিহাসে কিছু নাম থাকে যাদের উল্লেখ মানেই সম্মান, অনুপ্রেরণা এবং সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্‌ওয়ামে নক্রুমা সেই নাম। তিনি শুধু ঘানার স্বাধীনতার রূপকার নন, ছিলেন আফ্রিকার ঐক্যের স্থপতি। তার জীবনী কেবল রাজনৈতিক কাহিনি নয়—এটি এক যুবকের গল্প, যে নিজের গ্রামের মাটির গন্ধ বুকে নিয়ে, দূর দেশ থেকে শিক্ষা অর্জন করে, পুরো মহাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন ব...

প্যাট্রিস লুমুম্বা: কঙ্গোর স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক

Image
          প্যাট্রিস লুমুম্বা- কঙ্গোর স্বাধীনতার প্রতীক  একজন ডাকবাহক থেকে কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী—যার স্বপ্ন, সাহস ও আত্মত্যাগ আজও আফ্রিকার মুক্তির প্রেরণা। ১৯৬০ সালের ৩০ জুন। লিওপোল্ডভিল (আজকের কিনশাসা) শহরের স্বাধীনতা উৎসবের মঞ্চে বসে ছিলেন বেলজিয়ামের রাজা বোদোয়াঁ এবং কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা। রাজা বলছিলেন—“বেলজিয়ামের কল্যাণে তোমরা সভ্য হয়েছো।” কিন্তু মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে লুমুম্বা যা বললেন, তা উপনিবেশবাদীদের হৃদয়ে বজ্রাঘাত করল। তিনি ঘোষণা করলেন—“আমরা নিজের রক্ত, অশ্রু আর ঘামের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের স্বাধীনতা কেউ উপহার দেয়নি।” সেই দিন থেকেই লুমুম্বা শুধু কঙ্গোর নয়, সমগ্র আফ্রিকার বিদ্রোহী আত্মার প্রতীক হয়ে ওঠেন। এই ব্লগে আমরা জানব প্যাট্রিস লুমুম্বার শৈশব, রাজনৈতিক উত্থান, কঙ্গোর স্বাধীনতার সংগ্রাম, পশ্চিমা ষড়যন্ত্র, তাঁর হত্যাকাণ্ড এবং কীভাবে তিনি আজও বিশ্বে অবিনাশী অনুপ্রেরণার প্রতীক। শৈশব ও বেড়ে ওঠা ১৯২৫ সালের ২ জুলাই, বেলজিয়ান কঙ্গোর ওনালুয়া গ্রামে জন্ম নেন প্যাট্রিস এমেরি লুমুম্বা। সাধারণ কৃষক পরিব...

বিশ্বে গণতান্ত্রিক মনোনয়ন মডেল – প্রাইমারি নির্বাচন

 পর্ব ২:  ভূমিকা গণতন্ত্রের প্রাণ হলো জনগণের অংশগ্রহণ। কিন্তু শুধুমাত্র সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নয়, বরং দলের প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রেও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। এজন্য প্রাইমারি নির্বাচন (Primary Election) মডেল বিশ্বের অনেক উন্নত গণতন্ত্রে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি একটি প্রক্রিয়া যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয় সরাসরি দলের নিবন্ধিত সদস্য বা ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া দলীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সবচেয়ে স্বচ্ছ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এখনো প্রাইমারি নির্বাচন প্রচলিত নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স এবং আরও অনেক দেশ সফলভাবে এটি ব্যবহার করছে। আজকের আলোচনায় আমরা বিশ্বে প্রাইমারি নির্বাচন মডেল এবং এর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করব। প্রাইমারি নির্বাচনের মূল ধারণা প্রাইমারি নির্বাচন মূলত দলীয় প্রার্থী নির্ধারণের একটি পদ্ধতি। এখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চেয়ে সদস্য ও ভোটারদের মতামত প্রাধান্য পায়। প্রার্থীরা সাধারণ জনগণ বা দলীয় ভোটারদের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক...

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

 পর্ব ৩ ই-ভোটিং: বাংলাদেশের প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ "যদি ১ কোটি প্রবাসী ভোট দিতে পারত, তাহলে বাংলাদেশ আজ কেমন হতো?" ভূমিকা ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি দেশের উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ডিজিটাল হওয়া, পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন ও ট্র্যাকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রসার—সবকিছুই ডিজিটাল রূপান্তরের সাফল্য। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে: প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ই-ভোটিং কি হতে পারে ভবিষ্যতের সমাধান? ই-ভোটিং শুধু প্রবাসীদের জন্য নয়, দেশের ভেতরেও ভোটের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ বাড়াতে পারে। তবে এটির সঠিক প্রয়োগ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। বিশ্বজুড়ে প্রবাসীদের ভোটদানের প্রধান পদ্ধতিগুলো: 1. 📨 পোস্টাল ভোট (Postal Voting) পদ্ধতি: ভোটাররা ডাকযোগে ব্যালট পেপার গ্রহণ ও পাঠান। কার্যকারিতা: নিরাপদ ও তুলনামূলকভাবে কম প্রযুক্তিনির্ভর। পুরনো ও পরীক্ষিত পদ্ধতি, অনেক দেশে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত। ব্যবহার করে: যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড। 2. 🌐 ইলেকট্রনিক ভোট (Internet Voting / i-Voting) পদ্ধতি: ভ...

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

পর্ব ২  বিশ্বে প্রবাসী ভোটাধিকার: সফল উদাহরণ ও বাংলাদেশে সম্ভাবনা "প্রায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী—তাদের কি কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার নেই?” বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি দেশে প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ফিলিপাইন, মেক্সিকো—সবাই প্রবাসীদের ভোটের আওতায় এনেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী বাধা? এই ধারাবাহিক লেখায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ। ভূমিকা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তাদের প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। কিন্তু রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, বিশেষ করে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে দেশভেদে পার্থক্য স্পষ্ট। উন্নত দেশগুলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নতুন প্রযুক্তি এবং নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অথচ বাংলাদেশে এই প্রশ্নটি এখনও আলোচিত ও বিতর্কিত। এই লেখায় আমরা দেখব কিভাবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রবাসীদের ভোটের সুযোগ দিয়েছে, কোন মডেলগুলো সফল হয়েছে, এবং বাংলাদেশ এ থেকে কী শিখতে পারে। ভারতের ডাকযোগে ভোট ব্যবস্থা ভারতীয় প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ডাকযোগে ভোট একটি কার্যকর ব্যবস...

ভোটহীন কোটি প্রাণ: প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বাংলাদেশের দায়”

পর্ব ১ প্রবাসীদের ভোটাধিকার: চ্যালেঞ্জ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা "যারা রেমিট্যান্সে দেশ চালায়, তারাই কেন ভোটে অংশ নিতে পারে না?” ভূমিকা বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তার পেছনে দেশের প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষের অবদান অসামান্য। তারা বিদেশের মাটিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করছে। শুধু অর্থনৈতিক দিক নয়, দেশের উন্নয়ন, সামাজিক পরিবর্তন, এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিতেও তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে—প্রবাসীরা কি তাদের ভোটাধিকার কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারছে? বাংলাদেশের প্রবাসীদের জন্য ভোটদান পদ্ধতি এখনও সীমাবদ্ধ ও জটিল, যা আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রবাসী ভোটাধিকার: বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও এই অধিকার বাতিল হয়নি, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে প্রবাসীরা যদি জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) রাখে এবং ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে, তবে দেশে এসে ভোট দ...

স্বৈরশাসনের ছায়া থেকে আলোর পথে

পর্ব ৩: স্বৈরশাসনের পর গণতন্ত্রের সফল রূপান্তর: বিশ্ব থেকে শিক্ষা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা। পাঠকের প্রশ্ন:  “একবার স্বৈরশাসকের পতন হলে রাষ্ট্র কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে? আর বাংলাদেশ কি পারবে এই দুর্বৃত্ত চক্র থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে?" 🔶 ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় সামরিক হস্তক্ষেপ, স্বৈরশাসনের জুজু এবং গণতন্ত্রের মুখোশে একচ্ছত্র আধিপত্য বারবার জাতিকে পেছনে টেনেছে। বারবার স্বৈরশাসক পতনের পরও আমরা স্থায়ী সংস্কারমুখী রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। প্রশ্ন উঠছে— বাংলাদেশ কি কোনো বিকল্প পথে যেতে পারত? এবং এখন— আমরা কীভাবে উত্তরণের দিকে যেতে পারি? এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো: সফলভাবে স্বৈরশাসন-পরবর্তী পুনর্গঠনের দেশগুলো থেকে শিক্ষা ব্যর্থ রাষ্ট্রগঠনের বাস্তব উদাহরণ বাংলাদেশের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকনির্দেশন 🔹 বিশ্বে স্বৈরশাসন পরবর্তী সফল রূপান্তরের উদাহরণ: ১. চিলি: পিনোচেটের বিদায় ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন আগস্তো পিনোচেটের পতনের পর চিলিতে ধাপে ধাপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৯০ সালে  তার পতন ঘটলে  চিলি সফলভাবে সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে,একটি শক্তিশ...