অষ্টম পর্ব : ফিলিপাইনের নারী বিপ্লবীরা: সাহস, নেতৃত্ব ও স্বাধীনতার গল্প


পাঠকের প্রতি প্রশ্ন 

আপনি কি মনে করেন, একজন নারী কি সমাজ ও ইতিহাসের মূলধারায় নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ জিততে পারে?

ভূমিকা

ইতিহাসের পাতা উল্টালে বিপ্লব মানেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে—যুদ্ধক্ষেত্রে তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ সৈনিক, পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া নেতা, কিংবা স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনার প্রজ্ঞাময় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু এর আড়ালে বহু কণ্ঠস্বর থেকে যায়, যেগুলো উচ্চারিত হয় না পাঠ্যবইয়ের পাতায় কিংবা রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্মরণে। সেই কণ্ঠস্বরগুলোর ভেতরে সবচেয়ে তীব্র, সবচেয়ে অগ্নিময় ছিল নারীদের কণ্ঠস্বর।


ফিলিপাইনের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি সেই নারীদের নাম আমরা না উচ্চারণ করি—যাঁরা নীরবতার নিরাপদ পথ বেছে নেননি, বরং দুঃসাহসী কণ্ঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন; যাঁরা পতাকা সেলাই করেছিলেন যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন বলা নিষিদ্ধ ছিল; যাঁরা আহত যোদ্ধার সেবা করেছিলেন মাতৃস্নেহে; আবার যাঁরা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন বিপ্লবের অগ্নিশিখা—যাঁদের আলোয় জাতির আত্মা প্রজ্বলিত হয়েছে।


উপনিবেশিক শাসনের পটভূমি ও নারীর অবস্থান

স্প্যানিশরা ১৫৬৫ সাল থেকে ফিলিপাইন শাসন শুরু করে। প্রায় সাড়ে তিন শতকেরও বেশি সময় ধরে এশিয়ার এই দ্বীপপুঞ্জ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। ধর্মপ্রচারক পুরোহিত থেকে শুরু করে সামরিক কর্মকর্তারা সমাজব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে দখল করে নেয়। নারীরা এই ব্যবস্থায় সীমিত ভূমিকা পালন করতেন। তাঁদের কাছে প্রত্যাশা ছিল—গৃহস্থালির দায়িত্ব, সন্তান লালন-পালন এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালন।

কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে—যত বেশি বাঁধন, ততই প্রবল প্রতিরোধ। এই নারীরাই যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখলেন, তখন তাঁরা আর কেবল মা বা স্ত্রী হিসেবে নিজেদের সংজ্ঞায়িত করলেন না; তাঁরা হয়ে উঠলেন সৈনিক, গুপ্তচর, পতাকা সেলাইকারিণী, অথবা আশ্রয়দাত্রী।


নারী প্রতিরোধের স্তম্ভ


মেলচোরা অ্যাকুইনো — তান্দাং সোরা, ফিলিপাইন বিপ্লবের জননী

 মেলচোরা আকুইনো   ৬ জানুয়ারি ১৮৬৪ সালে Caloocan, Manila-এর একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পরিবার কৃষক ও সাধারণ ব্যবসায়ীর পরিবার হলেও তিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত নৈতিক ও যত্নশীল ছিলেন।

শৈশবে তিনি পরিবারের সঙ্গে কৃষি ও গৃহস্থালীর কাজ শিখেছিলেন, যা পরে বিপ্লবীদের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহের কাজে কাজে লাগেছিল। তিনি ইসলামিক ও ক্যাথলিক শিক্ষার মিশ্রিত নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, যা তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহানুভূতিশীল মনোবলকে প্রভাবিত করেছিল।

 তাঁর হাতে অস্ত্র ছিল না,তিনি কখনো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি কিন্তু তিনি বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্রে ছিলেন। নিজের দরিদ্র কুটিরকে তিনি রূপ দিয়েছিলেন বিপ্লবীদের আশ্রয়কেন্দ্রে। ক্ষুধার্ত সৈনিকদের জন্য রান্না করেছেন, আহতদের সেবা করেছেন, নিজের সামান্য সঞ্চয় পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় চুরাশি, অথচ সাহসিকতায় তরুণদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।

স্প্যানিশ শাসকরা  মেলচোরা আকুইনো এর কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছিল। ১৮৯৬ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে গুয়ামে নির্বাসিত করেছিল। কিন্তু বার্ধক্য কিংবা নির্বাসন কোনোটিই তাঁর মনোবল ভাঙতে পারে নি।

 মেলচোরা আকুইনো এর অবদান কেবল রাজনৈতিক ছিল না। তিনি ফিলিপিনো সমাজে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রচারেরও পথ দেখিয়েছেন।স্থানীয় জনগণকে বিপ্লবের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক নির্দেশ করে বিপ্লবে উজ্জীবিত করতেন।

ইতিহাসে তাকে Katipunan আন্দোলনের “Grandmother of the Revolution” হিসেবে স্মরণ করা হয়।পাঠ্যপুস্তক ও সমাজে তার জীবন পাঠ নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনা শেখায়। ফিলিপিনসে বহু স্কুল, রাস্তা ও সরকারি ভবন তার নামে নামকরণ হয়েছে।তিনি নারীর শক্তি, ত্যাগ ও নেতৃত্বের চিরন্তন প্রতীক।তিনি প্রমাণ  করেছেন, যুদ্ধের ময়দান ছাড়া ও একজন মানুষ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে উঠতে পারে। 

মেলচোরা আকুইনো ১৮৯৯ সালে  মৃত্যুবরণ করেন। 


গ্রেগোরিয়া দে জেসুস — কাতিপুনানের লাকাম্বিনি

আন্দ্রেস বনিফাসিওর তরুণী স্ত্রী গ্রেগোরিয়া দে জেসুস ছিলেন বিপ্লবের আরেক অনন্য প্রতীক। তাঁকে বলা হতো “লাকাম্বিনি”, অর্থাৎ কাতিপুনানের অনুপ্রেরণা ও রক্ষক।

স্বামী বনিফাসিওর মৃত্যুর পর তাঁর জীবন যেন ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু তিনি সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করেছিলেন। তিনি গোপনে বার্তা বহন করেছেন, বিপ্লবী সংগঠন চালু রেখেছেন এবং নারীদের সংগঠিত করেছেন। তাঁর দৃঢ়তা প্রমাণ করেছিল—বিপ্লব কেবল তরবারির ধারেই নয়, নারীর বুকের সাহসেও টিকে থাকে।


তেরেসা মাগবানুয়া — ভিসায়ান জোয়ান অব আর্ক

ফিলিপাইনের যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর প্রতিচ্ছবি সবচেয়ে উজ্জ্বল হয় যখন উচ্চারণ করা হয় তেরেসা মাগবানুয়ার নাম। তিনি শিক্ষিত পরিবার থেকে এসেছিলেন, হয়তো আরামদায়ক জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা ছেড়ে দিলেন, ঝাঁপিয়ে পড়লেন বিপ্লবের দলে।

তাঁকে ডাকা হয়েছিল “ভিসায়ান জোয়ান অব আর্ক” নামে। তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে হাতে অস্ত্র নিয়ে সরাসরি শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বহু যুদ্ধে বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়েছিল। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে নারী কেবল মাতৃস্নেহের প্রতীক নন, যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি হতে পারেন বজ্রকণ্ঠীর মতো।


আগুয়েদা কাহাবাগান — ফিলিপাইনের একমাত্র মহিলা জেনারেল

স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফিলিপাইন পেয়েছিল এক বিরল নারী সেনানায়ক—আগুয়েদা কাহাবাগান। তিনি ছিলেন ইতিহাসে ফিলিপাইনের একমাত্র স্বীকৃত মহিলা জেনারেল।

সাদা পোশাক পরে তিনি সৈন্যদের নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর হাতে ঝলসানো তলোয়ার শত্রুর মনে ভয় জাগাতো। কেবল একজন যোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন এক প্রতিরোধের প্রতীক, যিনি প্রমাণ করেছিলেন—নারী নেতৃত্ব যুদ্ধক্ষেত্রেও সমান শক্তিশালী হতে পারে।


ত্রিনিদাদ টেকসন — বিয়াক-না-বাতোর জননী

ত্রিনিদাদ টেকসনকে ডাকা হতো “বিয়াক-না-বাতোর জননী” নামে। তিনি একের পর এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আহত সৈন্যদের রক্ত দিতে তিনি নিজেই এগিয়ে যেতেন, আবার যুদ্ধক্ষেত্রে হাতে অস্ত্রও তুলতেন।

তিনি একসাথে মা ও যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবনী প্রমাণ করে—মাতৃত্ব ও বীরত্বের সংমিশ্রণ ফিলিপাইনের বিপ্লবকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল।


গ্যাব্রিয়েলা সিলাং — প্রথম নারী বিপ্লবী নেত্রী

১৮শ শতকের বিদ্রোহের ইতিহাসে সবচেয়ে অনন্য নাম হলো গ্যাব্রিয়েলা সিলাং। তাঁর জন্ম ১৯ মার্চ, ১৭৩১ সালে,সান্তা, ইলোকোস সুর, ফিলিপাইন। তিনি ছিলেন এক কৃষক পরিবারের মেয়ে। অল্প বয়সেই তিনি সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং দৃঢ় চরিত্রের জন্য পরিচিত হন। কিশোরী অবস্থায় তার বিয়ে হয়, কিন্তু  অল্প বয়সেই তিনি বিধবা হন।পরে তিনি বিদ্রোহী নেতা দিয়েগো সিলাং কে  বিয়ে করেন, পরে  দিয়েগো  নিহত হলে তিনি বিদ্রোহের নেতৃত্ব নেন। ফিলিপাইনের ইতিহাসে তিনি প্রথম নারী বিপ্লবী নেত্রী যিনি স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের স্বাধীনতার  নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।



আমার লক্ষ্য হলো স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম

 স্বামী দিয়েগো সিলাং ফিলিপাইনে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন ফিলিপাইন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছিলেন।১৭৬৩ সালের ২৮ মে, বিদ্রোহ চরমে উঠলে, স্পেনীয় কর্তৃপক্ষ, দিয়েগো সিলাং কে হত্যা করে। মিগুয়েল ভিগান্দা দে ভারগাস (Miguel Vicos) নামের এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করে যিনি  দিয়েগো সিলাং-এর পরিচিত ও বন্ধু,তার বিশ্বাসঘাতকতায়  স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ  দিয়েগোকে হত্যা করে। 

এই সময় গ্যাব্রিয়েলা ভেঙে পড়েননি, বরং নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। তিনি বিদ্রোহীদের মূল নেতৃত্নে চলে আসেন।স্থানীয় উপজাতিদের সঙ্গে একত্র হয়ে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে গেরিলা লড়াই চালান(বিশেষ করে ইলোকোস অঞ্চলে)।

ফিলিপাইনের প্রথম নারী স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পান।গ্যাব্রিয়েলা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে বিদ্রোহ সংগঠিত করেন।তিনি স্পেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে একাধিক আক্রমণ পরিচালনা করেন।তার কৌশল ছিল গেরিলা যুদ্ধ, যা স্পেনীয় সেনাদের বিপাকে ফেলে।

একজন নারী এত বড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—এটি স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের জন্য বড় মাথা ব্যথার কারণ ছিল।তারা গ্যাব্রিয়েলাকে দমন করার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন।পরে স্প্যানিশ বাহিনী তার দলকে পরাস্ত করে এবং তাকে বন্দি করে। ধারণা করা হয় স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বা উপজাতিরা তার অবস্থান স্প্যানিশদের জানিয়ে দেয়। ২০ সেপ্টেম্বর ১৭৬৩, ভিগান শহরে তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়।।মৃত্যুকালে তার বয়স মাত্র ৩২।তার ফাঁসি স্পেনীয়দের অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে দিলেও , ফিলিপিনো জনগণের হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন স্বাধীনতার প্রতীক,  জোয়ান অফ আর্ক হিসেবে। 

🌿 আঞ্চলিক নারী নেতৃত্ব:

জাতীয় পর্যায়ে যেমন কয়েকজন নারী অমর হয়ে আছেন, তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও অসংখ্য নারী তাঁদের জীবন দিয়ে বিপ্লবকে পূর্ণতা দিয়েছেন।


🔹 ⚡ পাত্রোসিনিয়া গাম্বোয়া (ইলোইলো, ভিসায়াস) – “হিরোইন অব হারো”

পাত্রোসিনিয়া গাম্বোয়া ১৮৭০ সালে ইলোইলোতে জন্মগ্রহণ করেন। এক মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া পাত্রোসিনিয়ার ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার প্রতি প্রবল  আগ্রহ  ছিল ।মাতা-পিতার কাছ থেকে নৈতিক শিক্ষা ও সহমর্মিতা শিখেছিলেন। পরিবারে সাধারণ নারীর মতো দায়িত্ব পালন করলেও তিনি  স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া যুবকদের প্রশিক্ষণ ও আঞ্চলিক সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৮৯৮ সালে তিনি ফিলিপাইনের পতাকা প্রস্তুত ও বিপ্লবীদের সহায়তা করেন যা বিপ্লবীদের  মানসিক শক্তি ও সাহস যোগায়। 

 তিনি ১৯০৮ সালে মৃত্যু বরণ করেন। ফিলিপাইনের  বিপ্লবী ইতিহাসে  তিনি  অমর হয়ে আছেন। 


🔹 🩸 নাজারিয়া লাগোস (পানায়)

নাজারিয়া লাগোস ১৮৭৫ সালে পানায়ে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়স থেকেই মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি বিশেষ দরদ অনুভব করতেন ।

শিক্ষিত পরিবারে  বড় হওয়া এই অদম্য সাহসী নারী বিপ্লবী ক্যাম্পে নার্স হিসেবে আহত সৈনিকদের  সেবা করার পাশাপাশি বিপ্লবীদের কাছে গোপন বার্তা পৌঁছে দিতেন।তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও  একজন সংগঠক হিসেবে বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে বড় ভূমিকা রাখেন। 

১৯১০ সালে মৃত্যু, আঞ্চলিকভাবে স্মরণীয়।


🔹 📜 রেমেদিওস গোমেজ (নুয়েভা এসিজা, লুজন)

রেমেদিওস গোমেজ ১৮৬৮ সালে লুজনে জন্ম গ্রহণ করেন। সাধারণ শিক্ষিত পরিবারে বড় হওয়া এই নারী  ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অটুট ছিলেন। তিনি গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে  বার্তা সংগ্রহ করে বিপ্লবী বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করেন। সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিপ্লবের সফলতায়  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

 তিনি ১৯০৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। 


🔹 🎨 মারসেলা আগনসিলো (বাটাঙ্গাস)

মারসেলা আগনসিলো ১৮৭২ সালে বাটাঙ্গাসে জন্ম গ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের জন্ম হয়। শি ক্ষিত পরিবারে বড় হওয়া এই  স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা  আঞ্চলিক নারী শ্রমিকদের সমন্বয়ে বিপ্লবীদের সহায়তা  এবং জাতীয় পতাকা ও প্রতীক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

 তিনি ১৯১২ সালে মৃত্য বরণ করেন। 


🔹 🏹 হোসেফা এসকোদা (ইলোকোস নর্তে)

হোসেফা এসকোদা ১৮৭৭ সালে ইলোকোস নর্তে জন্ম গ্রহণ করেন ।শিক্ষিত  পরিবারে বেড়ে ওঠেন এবং ছোটবেলা থেকেই  সামাজিক সুবিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। পরবর্তীতে সাধারণ গৃহবধূ থেকে বিপ্লব ও নেতৃত্বের প্রতি  আগ্রহী হয়ে ওঠেন  এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে জাপানি দখলদারদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষিত ও সংঘটিত করে বিপ্লবী কার্যক্রমে অবদান রাখেন।

তিনি ১৯১৫ সালে মৃত্যু বরণ করেন। 


🔹 🌾 সালুদ আলগাব্রে (রিজাল)

সালুদ আলগাব্রে ১৮৬৫ সালে রিজালে জন্ম গ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকেই কৃষক সমাজের সঙ্গে নিবিড় পরিচয় গড়ে ওঠে। লেখাপড়া বেশি দূর না হলেও সামাজিক  ন্যায়বিচারের প্রতি সবসময়ই  দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল।কৃষক বিদ্রোহে  নেতৃত্বদানকারী একমাত্র নারী নেতা এবং স্থানীয় আন্দোলনের সংগঠন ও নেতা।তার উদ্দেশ্য ছিল কৃষক আন্দোলনের শক্তি ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। 

 তিনি ১৯১১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। 


🔹 🍃 আলেজা রোসা (লাগুনা)

আলেজা রোসার জন্ম ১৮৭০ সালে, লাগুনায়  । ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে অন্যকে  সহায়তা ও দায়িত্ববোধের মনোভাব গড়ে উঠে।পরিবারে সাধারণ নারীর ভূমিকা পালন করলেও তিনি আঞ্চলিক বিপ্লবীদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে তিনি সহায়তা করেন। বিশেষ করে খাদ্য ও যোগাযোগ সহায়তা প্রদান করেন। 

১৯১৪ সালে মৃত্যু তিনি মৃত্যু বরণ করেন।


এই নারীরা হয়তো সব বইয়ে নেই, কিন্তু তাঁদের অবদান না থাকলে বিপ্লবের চাকা সম্পূর্ণ হতো না।


তবে ইতিহাসে অল্প জানা বা অপরিচিত অনেক নারী বিদ্রোহী ছিলেন যাঁদের কাজ নথিভুক্ত হয়নি বা স্থানীয় কিংবদন্তি হিসেবেই রয়ে গেছে। তারা ছিল গুপ্তচর, বার্তা বাহক, আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসক, খাদ্য সরবরাহকারী, বা স্থানীয় আন্দোলনের সংগঠক। এদের নাম হয়তো প্রতিটি ইতিহাসের বইতে নেই, কিন্তু তাঁদের ত্যাগ ও সাহসিকতা বিপ্লবের অগ্রযাত্রাকে স্থিতিশীল করেছে।


এইভাবে, ফিলিপাইনের স্বাধীনতার কাহিনীতে প্রতিটি নারী বিপ্লবী – পরিচিত হোক বা অজানা – গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা মিলিতভাবে জাতিকে স্বাধীনতার পথে পরিচালিত করেছে।


বিদ্রোহের উত্তরাধিকার


স্বাধীনতার পর তাঁদের অবদান ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। আজকের ফিলিপাইনের নারী নেত্রী ও আন্দোলনকারীরা তাঁদেরকে প্রেরণার উৎস হিসেবে দেখেন। সংসদ, রাজনীতি, শিক্ষা, এমনকি সামাজিক নেতৃত্বে ফিলিপাইনের নারীরা যে দৃঢ়তার সঙ্গে উঠে এসেছেন, তার মূল শিকড় রোপিত হয়েছিল এই বিপ্লবী নারীদের হাতেই।


উপসংহার

ফিলিপাইনের বিপ্লবের ইতিহাসে নারীরা ছিলেন নিঃশব্দ শক্তি, গোপন অনুপ্রেরণা এবং কখনো কখনো দৃশ্যমান অগ্নিশিখা। তাঁরা কেউ পতাকা সেলাই করেছেন, কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, কেউ সরাসরি যুদ্ধে নেমেছেন, আবার কেউ মাতৃত্বের মমতা দিয়ে বিপ্লবীদের আগলে রেখেছেন।

তাঁদের নাম হয়তো সব পাঠ্যবইয়ে লেখা নেই, কিন্তু তাঁদের ত্যাগ ছাড়া ফিলিপাইন আজকের স্বাধীন দেশ হয়ে উঠতে পারত না। ইতিহাসে তাঁদের কণ্ঠস্বরই আসলে সেই অগ্নিশিখা, যআজও ফিলিপাইন তথা পৃথিবীর  নারীরা যখন নিজেদের অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেন, তখন এইসব নারী বিপ্লবীদের  আত্মা তাদের অনুপ্রাণিত করে।


Comments

Popular posts from this blog

দ্বিতীয় পর্ব :প্রাথমিক পর্যায়ে চালু হওয়া দেশগুলোতে পি আর পদ্ধতির ধরন

প্রথম পর্ব: পি আর পদ্ধতির ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ধারায় এর প্রতিফলন

তৃতীয় পর্ব : পি আর পদ্ধতির সফলতার গল্প