প্রথম পর্ব : ভিয়েতনাম: উপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস


ভিয়েতনামের ইতিহাস যেন এক মহাকাব্য। ছোট্ট এক দেশ, কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তারা। কখনও ফরাসি উপনিবেশ, কখনও জাপানি দখলদারিত্ব, আবার কখনও মার্কিন আগ্রাসন—সবকিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভিয়েতনাম জাতি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাদের এই সংগ্রাম শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় রক্ষার জন্যও ছিল।

ফরাসি উপনিবেশবাদ ও শোষণের অন্ধকার

ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্স দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। ১৮৫৮ সালে ফরাসি নৌবাহিনী ভিয়েতনামে প্রথম হামলা চালায়। ধীরে ধীরে ১৮৮৭ সালে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া মিলে ফরাসি ইন্দোচীন গঠিত হয়।

ফরাসিরা ভিয়েতনামকে ব্যবহার করত কৃষিজ সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবে। চাল, রাবার, কফি ও কয়লার বিপুল উৎপাদন হত, কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই চলে যেত ফরাসি অর্থনীতির পেটে। কৃষকরা হারাত নিজেদের জমি, শ্রমিকরা পরিণত হত দাসের মতো খেটে খাওয়া মজুরে।

ফরাসি শাসন ভিয়েতনামের সমাজ–সংস্কৃতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একদিকে আধুনিক শিক্ষা ও অবকাঠামো গড়ে উঠলেও তা ছিল কেবল উপনিবেশিক স্বার্থে। ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষ দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও নিপীড়নের শিকার হয়।


প্রাথমিক বিদ্রোহ ও জাতীয়তাবাদী জাগরণ

ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ হয়েছে। উনিশ শতকের শেষদিকে Cần Vương আন্দোলন (রাজাকে রক্ষা করার আন্দোলন) জনগণকে শাসকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এই আন্দোলনে কৃষক, সৈনিক, স্থানীয় নেতা সকলে মিলে লড়াই করেছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা দমন করা হয়।

এরপর বিশ শতকের শুরুতে জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো জন্ম নিতে থাকে। শিক্ষিত তরুণরা ফ্রান্সে গিয়ে স্বাধীনতার ধারণা শিখে দেশে ফিরে আসে। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন Nguyễn Sinh Cung, যিনি পরবর্তীতে হো চি মিন নামে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হন।


হো চি মিন ও আধুনিক ভিয়েতনামের জনক



         হো চি মিন,  ভিয়েতনামের স্বাধীনতার প্রতীক।

হো চি মিন ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার প্রতীকহো চি মিন ছিলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতার প্রতীক। তিনি প্রথমে ফ্রান্সে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, পরে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। রাশিয়ায় গিয়ে কমিউনিজমের ধারণা আত্মস্থ করেন। দেশে ফিরে এসে Indochinese Communist Party গঠন করেন।

তার নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে ভিয়েত মিন (Viet Minh) নামে মুক্তি ফ্রন্ট গড়ে ওঠে। লক্ষ্য ছিল—ফ্রান্স ও জাপানের দখলদারিত্ব থেকে ভিয়েতনামকে মুক্ত করা।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জাপানি দখল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ফরাসিদের কাছ থেকে ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। কিন্তু জাপানও ছিল নিষ্ঠুর শাসক। খাদ্য শস্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কারণে ১৯৪৫ সালে ভিয়েতনামে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়।

এই দুর্দশার সময়ে হো চি মিন ও ভিয়েত মিন জনগণের আস্থা অর্জন করে। তারা গ্রামে গ্রামে খাদ্য সরবরাহ ও প্রতিরোধ সংগঠিত করেছিল।


১৯৪৫ সালের স্বাধীনতা ঘোষণা

১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানের পরাজয়ের পর শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সেই সুযোগে ভিয়েত মিন হ্যানয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে হো চি মিন স্বাধীন ভিয়েতনাম রাষ্ট্র ঘোষণা করেন।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণার ভাষা ব্যবহার করে বলেছিলেন, “সব মানুষ সমান, তাদের জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, সুখের অধিকার রয়েছে।”

কিন্তু স্বাধীনতার সেই স্বপ্ন স্থায়ী হয়নি। ফরাসিরা পুনরায় ফিরে আসে এবং শুরু হয় দীর্ঘ প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধ।


প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধ (১৯৪৬–১৯৫৪)

ফরাসিরা ভিয়েতনাম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ভিয়েত মিন গেরিলা যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাহাড়, বন, নদী—সবকিছু তাদের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

এই যুদ্ধে সবচেয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ডিয়েন বিয়েন ফু যুদ্ধ (১৯৫৪)। জেনারেল ভো নুয়েন জিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েত মিন সেনারা ফরাসি বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে। এর ফলে ফ্রান্স বাধ্য হয় জেনেভা চুক্তি স্বাক্ষর করতে।

চুক্তির মাধ্যমে ভিয়েতনামকে অস্থায়ীভাবে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করা হয়। উত্তর ভিয়েতনাম চলে যায় হো চি মিনের কমিউনিস্ট সরকারের অধীনে, আর দক্ষিণ ভিয়েতনামে গঠিত হয় পশ্চিমা শক্তি সমর্থিত সরকার।


ভিয়েতনাম যুদ্ধ (১৯৫৫–১৯৭৫): মার্কিন আগ্রাসন

দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত ও অজনপ্রিয় ছিল। জনগণের বিরোধিতাকে দমন করার জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নেয়। ধীরে ধীরে দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে ভিয়েত কং গেরিলা আন্দোলন গড়ে ওঠে।

১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধ। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ছোট্ট ভিয়েতনামের উপর। ন্যাপকাম বোমা, এজেন্ট অরেঞ্জ রাসায়নিক অস্ত্র—সবকিছু ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু ভিয়েতনামের মানুষ হাল ছাড়েনি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কৃষকরা মাঠে ফসল ফলানোর পাশাপাশি যোদ্ধাদের খাবার জোগায়। গুহা ও টানেলের ভেতরে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ ঘাঁটি।


জয়ের ইতিহাস

অবশেষে ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল সাইগন পতন ঘটে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার ভেঙে পড়ে, মার্কিন সেনারা দেশ ছেড়ে পালায়। ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় একত্রিত হয়। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক বিজয়—বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে একটি ছোট্ট দেশ পরাজিত করল।


স্বাধীনতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস

স্বাধীনতার পরে ভিয়েতনাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গ্রামগুলো জ্বলেপুড়ে ছাই, ক্ষেত নষ্ট, অসংখ্য মানুষ প্রতিবন্ধী। অর্থনৈতিক অবরোধও ছিল। তবুও ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়।

১৯৮৬ সালে Đổi Mới সংস্কার নীতি চালু করে তারা। এর মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের পাশাপাশি বাজার অর্থনীতির সংস্কার শুরু হয়। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতি আসে। আজ ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর একটি।


ভিয়েতনামের ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতি

ভিয়েতনামের মানুষের জীবনযাত্রায় গ্রামীণ সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত। ধানক্ষেত, বাঁশঝাড়, নদী—এসব তাদের কবিতা, গান ও লোককাহিনীতে প্রতিফলিত।

Áo dài নামক ঐতিহ্যবাহী পোশাক নারীদের পরিচয়ের প্রতীক।

চন্দ্র নববর্ষ বা Tết উৎসব ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় উৎসব।

তাদের সাহিত্যে দেখা যায় দেশপ্রেম, কৃষিজীবন, আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধের ছাপ।


ভিয়েতনামের সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থা

স্বাধীনতার পর ভিয়েতনামের অন্যতম বড় অর্জন ছিল নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন। ১৯৪৬ সালে প্রথম সংবিধান গৃহীত হয়, যা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নির্মিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৯, ১৯৮০, ১৯৯২ এবং ২০১৩ সালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়।

বর্তমান সংবিধান (২০১৩) ভিয়েতনামকে সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এখানে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি। এটি আইন প্রণয়ন করে, বাজেট অনুমোদন করে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে অনুমোদন দেয়। প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপ্রধান হলেও বাস্তব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এভাবে ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, যদিও পশ্চিমা ধাঁচের বহুদলীয় গণতন্ত্র সেখানে নেই।


ভাষা ও সংস্কৃতি

ভিয়েতনামের রাষ্ট্রভাষা হলো ভিয়েতনামী (Tiếng Việt)। এটি অস্ট্রো-এশীয় ভাষা পরিবারভুক্ত। বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—ভাষাটি স্বরনির্ভর (tonal)। অর্থাৎ একই শব্দ উচ্চারণের ভিন্ন স্বরে ভিন্ন অর্থ বহন করে।

ভিয়েতনামী ভাষা আগে চীনা অক্ষর (Chữ Nôm) ব্যবহার করে লেখা হত। কিন্তু ফরাসি মিশনারিরা এটি রোমান হরফে রূপান্তর করেন, যা আজও প্রচলিত।

ভিয়েতনামের সাহিত্য সমৃদ্ধ। লোকগীতি, কবিতা, আধুনিক উপন্যাস সবকিছুতেই প্রতিফলিত হয়েছে সংগ্রাম, কৃষিজীবন, নদী-নালা ও স্বাধীনতার তৃষ্ণা।

খেলাধুলা

ভিয়েতনামে ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। জাতীয় দল এশিয়ান কাপ ও সি-গেমসে অংশ নেয় এবং জনগণের মধ্যে ভীষণ উন্মাদনা সৃষ্টি করে।
এছাড়া ঐতিহ্যবাহী ভো ভিয়েত (Võ Việt) নামক মার্শাল আর্ট তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। ড্রাগন নৌকা দৌড় (Dragon Boat Racing) এবং কুস্তি উৎসবও গ্রামীণ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতি ও উন্নয়ন

ভিয়েতনামের অর্থনীতি একসময় কৃষিনির্ভর ছিল। ধান উৎপাদনে তারা বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলির মধ্যে।
আজ ভিয়েতনামের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে বহুমুখী খাতের উপর—

কৃষি: চাল, কফি, কাজুবাদাম, মরিচ।

শিল্প: টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিকস, জুতা।

রপ্তানি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

পর্যটন: হা লং বে, হোই আন, হুয়ে’র ঐতিহাসিক নিদর্শন।

Đổi Mới সংস্কার নীতি (১৯৮৬) চালুর পর থেকে ভিয়েতনাম দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি।


শিক্ষা

ভিয়েতনামে সাক্ষরতার হার অত্যন্ত উচ্চ—প্রায় ৯৫% এর বেশি। শিক্ষা বিনামূল্যে এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় রাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ভিয়েতনামের তরুণরা আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষত প্রযুক্তি ও চিকিৎসাশাস্ত্রে।


জাতিগত জনগোষ্ঠী

ভিয়েতনামে প্রায় ৫৪টি জাতিগত গোষ্ঠী রয়েছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো কিন (Kinh) জাতিগোষ্ঠী, তারা দেশের প্রায় ৮৫% জনসংখ্যা।

সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে তাই, থাই, হ’মং, খমের, চাম প্রভৃতি।
তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক ও সংস্কৃতি ভিয়েতনামকে বহুবর্ণিল জাতিগত ঐক্যের প্রতীক করেছে।


জাতির জনক

ভিয়েতনামের জাতির জনক হিসেবে হো চি মিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং একজন দূরদর্শী নেতা ও দার্শনিক ছিলেন। সাধারণ পোশাক, সাদামাটা জীবনযাপন ও নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম তাকে জনগণের হৃদয়ে স্থায়ী স্থান দিয়েছে।


জাতীয় পতাকা

ভিয়েতনামের পতাকা অত্যন্ত সরল কিন্তু অর্থবহ। লাল পটভূমি স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের রক্তের প্রতীক, আর মাঝের হলুদ পাঁচ কোণা তারা শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, যুবক ও সৈনিকদের ঐক্যের প্রতীক।


জাতীয় সংগীত

ভিয়েতনামের জাতীয় সংগীত হলো “Tiến Quân Ca” (অর্থ: মার্চিং গান)। এটি রচনা করেছিলেন Văn Cao। গানটিতে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন গাঁথা আছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই এটি বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ১৯৪৫ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর একে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।


ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু

ভিয়েতনাম একটি দীর্ঘ উপকূলীয় দেশ। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত প্রায় ৩,২০০ কিলোমিটার লম্বা উপকূল রয়েছে। দেশটি তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত:

1. উত্তর ভিয়েতনাম – লাল নদীর বদ্বীপ।

2. মধ্যাঞ্চল – পাহাড়ি এলাকা ও উপকূলীয় সমভূমি।

3. দক্ষিণ ভিয়েতনাম – মেকং নদীর বদ্বীপ।


ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময়—উঁচু পাহাড়, ঘন জঙ্গল, বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি ও নদী।

জলবায়ু প্রধানত উষ্ণমণ্ডলীয় মৌসুমি। গ্রীষ্মে প্রচণ্ড বৃষ্টি, শীতে তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়া। উত্তরে চারটি ঋতু থাকলেও দক্ষিণ ভিয়েতনামে মূলত বর্ষা ও শুষ্ক ঋতু বিদ্যমান।


উপসংহার

ভিয়েতনামের ইতিহাস কেবল এক দেশের ইতিহাস নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির সংগ্রামের প্রতীক। উপনিবেশিক শক্তি, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে যে জাতি অদম্য সাহস নিয়ে লড়াই করেছে, ভিয়েতনাম সেই জাতির নাম।

সংবিধান প্রণয়ন, গণতান্ত্রিক কাঠামো, শিক্ষা বিস্তার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বহুজাতিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন—এসবই ভিয়েতনামকে আজকের অবস্থানে এনেছে।

তাদের পতাকার লাল রঙ ও পাঁচকোনা তারার মতোই ভিয়েতনামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, অবিচল এবং সংগ্রামপ্রিয়। স্বাধীনতার মহাকাব্য শেষ হয়নি; বরং প্রতিদিন তারা নতুন করে লিখছে অগ্রগতির ইতিহাস।


Comments

Popular posts from this blog

দ্বিতীয় পর্ব :প্রাথমিক পর্যায়ে চালু হওয়া দেশগুলোতে পি আর পদ্ধতির ধরন

প্রথম পর্ব: পি আর পদ্ধতির ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ধারায় এর প্রতিফলন

তৃতীয় পর্ব : পি আর পদ্ধতির সফলতার গল্প