তৃতীয় পর্ব : পি আর পদ্ধতির সফলতার গল্প

"গণতন্ত্রের ধারা : পি আর পদ্ধতির বিশ্লেষণ "

 [ তৃতীয় পর্ব : পি আর পদ্ধতির  সফলতার গল্প ]






তরুণের চিন্তা বদলাতে পারে গণতন্ত্রের গতিপথ।



পাঠকের প্রশ্ন


পি আর পদ্ধতি বাস্তবে কোথায় সবচেয়ে সফল হয়েছে? ছোট দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠ কিভাবে শক্তিশালী হয়েছে?





ভূমিকা


প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) ভোটারদের প্রতিটি কণ্ঠকে কার্যকর করার একটি শক্তিশালী উপায়। শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তবে কিছু দেশ দেখিয়েছে যে এই পদ্ধতি গণতন্ত্রকে আরও ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল করে।


এই পর্বে আমরা বিশ্বের চারটি দেশের উদাহরণ নেব: জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।





জার্মানি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণতন্ত্রকে টেকসই করা


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ছোট দলগুলোও সংসদে কণ্ঠ পেতে পারলে, ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব।


MMP সিস্টেম ব্যবহার করে ভোটাররা দুটি ভোট দেয়: প্রার্থী ও দল


ফলাফল: ছোট দলগুলো সংসদে আসতে পেরেছে


উপকারিতা: রাজনৈতিক বহুমতের পরিবেশ তৈরি, ভোটাররা আরও সক্রিয়



জার্মানির উদাহরণ দেখায় যে, PR পদ্ধতি শুধুমাত্র ন্যায্যতা দেয় না, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায়ও অবদান রাখে।





নেদারল্যান্ডস: রাজনৈতিক বহুমতের প্রতিফলন


নেদারল্যান্ডসে PR পদ্ধতি চালুর পর দেখা যায় যে:


ছোট দলগুলোও সংসদে স্থান পেয়েছে


ভোটের অনুপাত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে


সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠ শোনা গেছে



উদাহরণ: কোনো নির্বাচনে যদি একটি ছোট দল ১০% ভোট পায়, তারা ১০% আসনে অংশ পায়। এতে গণতন্ত্রে বহুমতের পরিবেশ তৈরি হয়।





নিউজিল্যান্ড: FPTP থেকে MMP–এ রূপান্তর


১৯৯০-এর দশকে নিউজিল্যান্ড FPTP পদ্ধতি থেকে Mixed Member Proportional (MMP) পদ্ধতিতে আসে।


ভোটাররা দুটি ভোট দেয়: প্রার্থী ও দল


ছোট দল ও সংখ্যালঘুরা ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পায়


জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ বেড়েছে



উদাহরণ: ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ছোট দলগুলোর ভোটের অনুপাতে আসন বরাদ্দ প্রাপ্তির ফলে রাজনৈতিক বহুমত এবং সংখ্যালঘুর অংশগ্রহণ স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।





দক্ষিণ আফ্রিকা: বর্ণবৈষম্যের পর PR-এর ভূমিকা


দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে বর্ণবৈষম্য এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক নিপীড়নের পর:


১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন ভোটাধিকার কার্যকর করা হয়


PR পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিগত ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায়


এটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র গঠনে সহায়ক হয়েছে



উদাহরণ: আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC), ডেমোক্রেটিক আলায়েন্স (DA) ও অন্যান্য দল তাদের ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পেয়েছে।





ছোট দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠ শক্তিশালী হওয়া


এই দেশগুলোতে দেখা গেছে:


1. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে



2. ছোট দল: ভোটের অনুপাতে আসন পেয়েছে



3. নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী: রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেড়েছে



4. রাজনৈতিক বহুমত: এক বা দুটি বৃহৎ দল একাধিপত্য করছে না




PR পদ্ধতি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠকেই নয়, বিভিন্ন মতকে সংসদে অন্তর্ভুক্ত করে।





বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিকতা


বাংলাদেশের FPTP পদ্ধতিতে দেখা যায়:


ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের কণ্ঠ প্রায়ই সংসদে পৌঁছায় না


ভোটের একটি বড় অংশ কার্যত নষ্ট হয়


রাজনৈতিক বহুমতের পরিবেশ তৈরি হয় না



যদি বাংলাদেশ PR পদ্ধতি গ্রহণ করতো, তাহলে:


ভোটের অনুপাত অনুসারে সংসদে আসন


ছোট দল ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কণ্ঠ


রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি



উদাহরণস্বরূপ, কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ৮–১০% ভোট পেলেও তারা সংসদে অংশ পেতে পারত, যা FPTP-এ সম্ভব নয়।





উপসংহার


বিশ্বের সফল দেশগুলো প্রমাণ করে যে পি আর পদ্ধতি ভোটের ন্যায্যতা নিশ্চিত করে  সংখ্যালঘু  ও ছোট দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।রাজনৈতিক বহুমত এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।



জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ দেখায় যে, পি আর কেবল তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবেও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।


বাংলাদেশে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে ভোটের ন্যায্যতা বৃদ্ধি পাবে, সংখ্যালঘু ও ছোট দলও কণ্ঠ পাবে, এবং রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
























Comments

Popular posts from this blog

দ্বিতীয় পর্ব :প্রাথমিক পর্যায়ে চালু হওয়া দেশগুলোতে পি আর পদ্ধতির ধরন

প্রথম পর্ব: পি আর পদ্ধতির ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ধারায় এর প্রতিফলন