প্রথম পর্ব : ফিলিপাইন: দ্বীপপুঞ্জ থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উত্তরণের গল্প



প্রতি দেশের ইতিহাসই তার সংগ্রাম, ত্যাগ এবং অর্জনের গল্প। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিলিপাইন সেই দেশের অন্যতম উদাহরণ, যেখানে জনগণ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে, স্বাধীনতা অর্জন করে এবং আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ফিলিপাইনের প্রতিটি দ্বীপে ইতিহাসের ছাপ, সংস্কৃতির রঙ এবং সমাজের বহুমাত্রিকতা প্রতিফলিত হয়।


✨ প্রিভিউ

ফিলিপাইন, প্রায় ৭,০০০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র, যার ইতিহাস উপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ। স্প্যানিশ, আমেরিকান ও জাপানি শাসন দেশটির সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই পোস্টে আমরা ফিলিপাইনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া, জনসংখ্যা, আবহাওয়া, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বৈচিত্র্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।


🏝️ প্রাক-উপনিবেশিক যুগ: প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তি

ফিলিপাইনের প্রাচীন ইতিহাস প্রায় ৩০,০০০ বছর পুরনো। প্রাথমিকভাবে, দ্বীপপুঞ্জে মালয়, চাইনিজ, ভারতীয় ও আরব বণিকদের মাধ্যমে বাণিজ্য, ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটে। স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন ছোট রাজ্য ও সুলতানাতের আকারে সংগঠিত হয়, যেমন সুলু সুলতানাত, মাগিন্ডানাও সুলতানাত এবং মায়নিলা শহর রাজ্য।


প্রাক-উপনিবেশিক সময়ে এই অঞ্চল বাণিজ্য ও কৃষির মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত। মানুষ চাষাবাদ, মৎস্য আহরণ ও হস্তশিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। সামাজিক কাঠামোতে ছিল রাজা বা সুলতানদের নেতৃত্ব, যাদের ন্যায় ও প্রশাসনিক ক্ষমতা জনগণের ওপর ভিত্তি করত।


🇪🇸 স্প্যানিশ উপনিবেশ (১৫৬৫–১৮৯৮): সংস্কৃতি, ধর্ম ও বিদ্রোহ

১৫৬৫ সালে মিগুয়েল লোপেজ দে লেগাজ্পি ফিলিপাইন অতিক্রম করেন এবং ম্যানিলাকে স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। স্প্যানিশরা ক্যাথলিক ধর্ম প্রচার করে শিক্ষার ব্যবস্থা উন্নত করলেও, স্থানীয় জনগণকে কর, জমিদারি এবং শ্রমের মাধ্যমে শোষণ করা হত।


স্প্যানিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম organized প্রতিরোধের সূচনা হয়। José Rizal, Andres Bonifacio এবং Emilio Aguinaldo ছিলেন সেই সময়ের নেতা যারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা প্রচার করতেন। Katipunan আন্দোলন বোনিফাসিওর নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এবং সরাসরি বিদ্রোহের মাধ্যমে স্প্যানিশ শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানায়।


🇺🇸 আমেরিকান উপনিবেশ (১৮৯৮–১৯৪৬): আধুনিকীকরণ ও দ্বন্দ্ব

১৮৯৮ সালের স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের পর, ফিলিপাইন আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে আসে। আমেরিকানরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, রাস্তা, হাসপাতাল এবং প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে।

Thomasites নামে আমেরিকান শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠদান শুরু করেন। গণতান্ত্রিক প্রশাসন ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে স্থানীয় জনগণকে শিক্ষিত করা হয়। তবে স্থানীয়দের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও মার্কিন শাসনের নীতির মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।


🇯🇵 জাপানি উপনিবেশ (১৯৪২–১৯৪৫): যুদ্ধ ও প্রতিরোধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ফিলিপাইন আক্রমণ করে। এই সময়ে স্থানীয় জনগণ ও পার্টিজানরা জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায়। মার্কিন সৈন্যরা গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে অ্যাকশন ও গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিরোধের অংশ নেয়।

যুদ্ধের সময়, সাধারণ জনগণ ভয়, অনিশ্চয়তা এবং খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়। তবে এই দুর্যোগের মধ্যেও ফিলিপাইনের জনগণ স্বাধীনতার স্বপ্নে দৃঢ় ছিল।


🇵🇭 স্বাধীনতা অর্জন (১৯৪৬): নতুন যুগের সূচনা

১৯৪৬ সালের ৪ জুলাই, ফিলিপাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন Manuel Roxas। স্বাধীনতার পর ফিলিপাইন একটি সংবিধিবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

স্বাধীনতার পর দেশটি:

প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করে

শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে

অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ করে

রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে


✊ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নায়করা

ফিলিপাইনের স্বাধীনতা আন্দোলন মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত:

1. শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবী আন্দোলন – José Rizal, Graciano López Jaena

2. গেরিলা ও বিপ্লবী আন্দোলন – Andres Bonifacio, Emilio Aguinaldo

3. সামরিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম – Katipunan আন্দোলন, বিভিন্ন সুলতানাতের প্রতিরোধ

এই নায়করা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।


আন্দ্রেস বোনিফাসিও,ফিলিপাইনের জাতির জনক 


ফিলিপাইনের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত আন্দ্রেস বোনিফাসিও। তিনি 1863 সালে ম্যান্ডালুয়ং, ম্যানিলা, ফিলিপাইনে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি স্পেনীয় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ফিলিপিনিয়ান স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ত্ব দিয়েছিলেন। বোনিফাসিও “কাটিপুনান” (Katipunan) নামে একটি গোপন বিপ্লবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা জনগণকে সংগঠিত করে স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উজ্জীবিত করেছিল। তাকে জাতির জনক বলা হয় কারণ তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রথম সশস্ত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আন্দ্রেস বোনিফাসিও 1897 সালে মৃত্যুবরণ করেন।

🌤️ আবহাওয়া ও ভূগোল

ফিলিপাইন একটি ট্রপিক্যাল দ্বীপপুঞ্জ, যার মোট ৭,০০০টিরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। প্রধান দ্বীপ হলো লুজন, ভিসায়াস, মিনডানাও।

আবহাওয়া: গরম ও আর্দ্র, বর্ষাকাল জুন থেকে নভেম্বর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: টাইফুন, ভলক্যানিক অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প

প্রাকৃতিক সম্পদ: বন, নদী, সমুদ্র, খনিজ ও চাষযোগ্য জমি


ফিলিপাইন একটি দ্বীপমালা রাষ্ট্র, যেখানে প্রায় ৭,৬৪১টি দ্বীপ রয়েছে। ভূপ্রকৃতির দিক থেকে দেশটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে রয়েছে উঁচু পর্বত, আগ্নেয়গিরি, নদী, হ্রদ এবং উপকূলীয় সমভূমি। ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ পর্বত হলো মাউন্ট আপো (Mount Apo), যার উচ্চতা প্রায় ২,৯৫৪ মিটার। এটি মিন্দানাও দ্বীপে অবস্থিত। এছাড়া মায়োন আগ্নেয়গিরি, যা তার নিখুঁত শঙ্কু আকৃতির জন্য বিশ্ববিখ্যাত, দেশটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্বত।


নদীর মধ্যে কাগায়ান নদী (Cagayan River) সবচেয়ে দীর্ঘ, যা লুজন দ্বীপে প্রবাহিত। পাসিগ নদী, আগুসান নদী, এবং পাম্পাঙ্গা নদীও গুরুত্বপূর্ণ। নদীগুলো দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। হ্রদের মধ্যে লাগুনা দে বে (Laguna de Bay) বৃহত্তম এবং রাজধানী ম্যানিলার কাছাকাছি অবস্থিত। এছাড়া তাল হ্রদ তার আগ্নেয় দ্বীপের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

সার্বিকভাবে ফিলিপাইন হচ্ছে একটি পাহাড়ি ও নদীবহুল দেশ, যার চারপাশে সমুদ্রবেষ্টিত এবং যার ভূপ্রকৃতি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়


ফিলিপাইনের প্রধান প্রধান বন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ম্যানিলা বন্দর, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। এছাড়া সেবু বন্দর ভিসায়াস অঞ্চলের জন্য, আর দাভাও বন্দর মিন্দানাও দ্বীপের কৃষিপণ্যের রপ্তানির জন্য বিখ্যাত। সুবিক বে ফ্রি-পোর্ট আধুনিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র, আর বাটাঙ্গাস বন্দর তেল আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ইলোইলো বন্দরও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

এসব বন্দর ফিলিপাইনের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে এবং দ্বীপগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

👥 জনসংখ্যা ও সমাজ

ফিলিপাইনের জনসংখ্যা প্রায় ১১৩ মিলিয়ন। এখানে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী রয়েছে:

Tagalog, Cebuano, Ilocano, Bisaya

ধর্মীয়ভাবে খ্রিস্টান ক্যাথলিক প্রায় ৮১%, মুসলিম প্রায় ৫%, বাকি অন্যান্য ধর্ম

সামাজিক কাঠামো বহুত্ববাদী। পরিবার, সম্প্রদায় এবং স্থানীয় ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।


ভাষার দিক থেকে, ফিলিপাইনে প্রায় ১৭০টির বেশি ভাষা ও উপভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে ফিলিপিনো (টাগালগভিত্তিক) ও ইংরেজি হচ্ছে রাষ্ট্রভাষা এবং সবচেয়ে ব্যবহৃত ভাষা। এছাড়া সেবুয়ানো, ইলোকানো, হিলিগায়নন, কাপাম্পাঙ্গান ইত্যাদিও বহুল প্রচলিত।


খাদ্যের ক্ষেত্রে, ফিলিপিনোরা সাধারণত ভাতকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, সবজি রান্না, এবং সয়া সস ও ভিনেগারভিত্তিক খাবার বেশ জনপ্রিয়। আদোবো, সিনিগাং, লেচন, এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার এখানকার বিশেষত্ব।


ফিলিপাইনের জনসংখ্যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আদিবাসী ও জাতিগত গোষ্ঠী রয়েছে। দেশটিতে প্রায় ১৭০টির বেশি স্বতন্ত্র জাতি ও উপজাতি আছে, যার মধ্যে বড় গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ইলোকানো, সেবুয়ানো, হিলিগাইনন, বিকোলানো, ইগোরট, মুংগকা, মটায়ান, ইত্যাদি। এই জাতিগত গোষ্ঠীগুলি মূলত বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক ও আচার-অনুষ্ঠান রক্ষা করে। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০–২০ শতাংশই আদিবাসী বা “ইন্ডিজিনাস পিপলস” হিসেবে বিবেচিত।

🏛️ সংস্কৃতি ও সভ্যতা

ফিলিপাইনের সংস্কৃতি স্প্যানিশ, আমেরিকান ও স্থানীয় প্রভাবের মিশ্রণ:

ফিলিপাইন একটি দ্বীপমালা দেশ হওয়ায় এখানে অনেক বন্দর রয়েছে, যা বাণিজ্য, পরিবহন ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


ফিলিপাইন একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেশ, যেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ক্রিসমাস ও ইস্টার অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালিত হয়, কারণ দেশটির অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান (ক্যাথলিক)। এছাড়া ফিয়েস্তা বা স্থানীয় ধর্মীয় উৎসব, যেখানে প্রত্যেক শহর বা গ্রাম তাদের পৃষ্ঠপোষক সন্তের সম্মানে অনুষ্ঠান করে, খুব জনপ্রিয়। আতি-আতিহান উৎসব, সিনুলো উৎসব, এবং পাহিয়াস উৎসবও বহুল পরিচিত। মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করা হয়। এসব উৎসবকে ঘিরে সামাজিক মিলন, নাচ, গান, খাবার ভাগাভাগি করা ফিলিপিনো সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।


সাহিত্য ও কবিতার ক্ষেত্রে, ফিলিপাইনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। আধুনিক ফিলিপিনো সাহিত্যে হোসে রিজাল (জাতীয় নায়ক, উপন্যাস Noli Me Tangere ও El Filibusterismo এর রচয়িতা), নিক জোয়াকিন, লাজারো ফ্রান্সিসকো, এডিথ তিয়েম্পো, এবং ফ্লোরান্তে বালাগতাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কবিতা ও সাহিত্যে তারা ফিলিপিনো জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনের চিত্র গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ফিলিপাইনের সংস্কৃতিতেও সঙ্গীত মানুষের জীবন ও আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এখানকার মানুষ যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব ও দৈনন্দিন জীবনে গান গায়, তেমনি শ্রম, প্রেম ও প্রকৃতির সঙ্গেও সঙ্গীত যুক্ত। 

প্রাচীন গান যেমন কুন্ডিমান প্রেম ও আবেগ প্রকাশ করে, হারানা রোমান্টিক সারপ্রাইজ গান, আর কুমিনটাং সাহসিকতা ও উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত। আধুনিক যুগে ওপিএম (Original Pilipino Music) পপ, রক ও হিপ-হপ ধারার গান জনপ্রিয়, যেখানে প্রেম, জীবন ও সামাজিক বিষয় তুলে ধরা হয়। এছাড়া ধর্মীয় গান যেমন হিমন ও গসপেল, আঞ্চলিক উৎসবের গান যেমন আতী-আতিহান, সিনুলগ ও পানাগবেনগা, এবং সিনেমা বা টিভি গানও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সব মিলিয়ে, ফিলিপিন গানের ধরনগুলো ঐতিহ্য, প্রেম, ধর্ম, উৎসব ও আধুনিক জীবনকে সুন্দরভাবে প্রতিফলিত করে।


ফিলিপাইনের জাতীয় সংগীত হলো “লুপাঙ্গ হিন্দি ফিলিপিনাস” (Lupang Hinirang), যা অর্থাৎ “Chosen Land” বা “প্রিয় দেশ” নামে পরিচিত। এটি 1898 সালে লেখা হয়েছিল জুলিয়ান ফিলিপিনো কুয়িননেজার কাব্য থেকে এবং সংগতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। হ্যামিল্টন ফিলিপিনো কুয়িননেজার (José Palma)। তিনি 1876 সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফিলিপিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কালে একজন কবি ও সাংবাদিক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর লেখা কাব্য মূলত দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার তাগিদ নিয়ে রচিত, যা পরে জাতীয় সংগীতের সুরের সঙ্গে মেলানো হয়। 1938 সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। গানটি দেশের স্বাধীনতা, জাতীয় ঐক্য এবং স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ করা সাহসী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। এটি মূলত প্রকৃত রাষ্ট্রপ্রেম ও দেশপ্রেমকে উদ্দীপ্ত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং স্বাধীনতা দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও স্কুলের মঞ্চে সাধারণত গাওয়া হয়।


ফিলিপাইনের জাতীয় খেলা হলো “আর্নিস” (Arnis), যাকে কখনও কখনও এস্ক্রিমা বা কালিও বলা হয়। এটি একটি প্রাচীন মার্শাল আর্ট, যেখানে কাঠের লাঠি, ছুরি বা খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হয়। আর্নিসকে ফিলিপাইনের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখা হয়।


তবে আধুনিক সময়ে ফিলিপিনোরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে বাস্কেটবল। দেশটির প্রতিটি শহর, গ্রাম ও পাড়ায় ছোট-বড় বাস্কেটবল কোর্ট দেখা যায়। স্কুল থেকে শুরু করে পেশাদার লিগ পর্যন্ত এই খেলার জনপ্রিয়তা অসাধারণ। এছাড়া বক্সিং (বিশেষ করে ম্যানি প্যাকিয়াওয়ের কারণে), ভলিবল ও বিলিয়ার্ডসও ফিলিপাইনে বেশ জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে পড়ে।

💡 শিক্ষা ও প্রযুক্তি

স্বাধীনতার পর, ফিলিপাইন শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে এবং প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ সংস্কৃতির সম্প্রসারণ ঘটায়।তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগ দেশকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করে। 

ফিলিপাইন-এ সাক্ষরতা হার ২০২০ সালের জনগণনা অনুযায়ী ৯৭.০ %। অর্থাৎ ৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে ৯৭ % লোক সহজ ভাষায় একটি বার্তা পড়তে ও লিখতে পারে

🏁 উপসংহার

ফিলিপাইন একটি দেশ, যা :প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে স্প্যানিশ, আমেরিকান ও জাপানি উপনিবেশের মাধ্যমে শাসিত ও শোষিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ফিলিপাইনের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা। প্রতিটি দ্বীপের গল্প আমাদের শেখায় যে সংগ্রাম, ঐক্য এবং সাহসিকতার মাধ্যমে জাতি গড়া সম্ভব।

















Comments

Popular posts from this blog

দ্বিতীয় পর্ব :প্রাথমিক পর্যায়ে চালু হওয়া দেশগুলোতে পি আর পদ্ধতির ধরন

প্রথম পর্ব: পি আর পদ্ধতির ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ধারায় এর প্রতিফলন

তৃতীয় পর্ব : পি আর পদ্ধতির সফলতার গল্প