গণতন্ত্রের আয়নায় পিআর সিস্টেম: বাংলাদেশে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা”
🌍পর্ব ২
🔵 সাবটাইটেল:
পিআর সিস্টেম নিয়ে অনেকেই আগ্রহী, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন সহজ নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো, আইন, ও সামাজিক বাস্তবতা কেমন—এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করবো, পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, কী বাধা আছে, এবং কোন পথে এগোতে পারি।
🌎গণতন্ত্রের আয়নায় পিআর সিস্টেম: বাংলাদেশে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
🔶 ১. বর্তমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে বাংলাদেশে 'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' (FPTP) পদ্ধতি চালু আছে। এই পদ্ধতিতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পায়, সে-ই জেতে—even if it’s only by 1 vote. এতে অনেক সময় ভোটের বড় অংশ 'অপ্রতিফলিত' থাকে।
একটি উদাহরণ: এক আসনে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী। বিজয়ী পেল ৩১% ভোট। বাকি ৬৯% ভোট অন্যদের পড়লো—তবে তারা সংসদে আসলো না।
এর ফলে ঘটে:
বহু ভোটের অপচয়
ছোট ও নতুন দলের অনুপস্থিতি
ভোটারদের আস্থা হ্রাস
---
🔶 ২. পিআর সিস্টেম বাস্তবায়নের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ কী?
✅ (ক) সংবিধান ও আইনগত বাধা:
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫(২) ধারা অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। পিআর সিস্টেম চালু করতে হলে এই ধারা সংশোধন করতে হবে। এটি একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া—যেটি সহজ নয়।
✅ (খ) রাজনৈতিক প্রতিরোধ:
বড় দলগুলো যেহেতু FPTP থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, তাই তারা সহজে এই পরিবর্তন চাইবে না। কারণ PR চালু হলে ছোট দলগুলো সংসদে ঢুকে পড়বে এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
✅ (গ) প্রশাসনিক ও কারিগরি প্রস্তুতি:
পিআর চালু করতে হলে নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ, তথ্যভিত্তিক তালিকা, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো প্রয়োজন।
✅ (ঘ) ভোটারের সচেতনতা:
নতুন পদ্ধতি মানে নতুন ধারণা। অনেক ভোটার তালিকা, আনুপাতিকতা ইত্যাদি নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রচার ও গণসচেতনতা জরুরি।
---
🔶 ৩. তাহলে কীভাবে এগোনো সম্ভব?
🟢 ধাপে ধাপে রূপান্তর:
একবারে পুরো পিআর সিস্টেম চালু না করে, আমরা ধাপে ধাপে এগোতে পারি। যেমন:
নারী সংরক্ষিত আসন: বর্তমানে দলভিত্তিক বরাদ্দ হয়। একে আনুপাতিক ভিত্তিতে গণ্য করা যায়।
জাতীয় তালিকা: নির্দিষ্ট কিছু আসন সব দলের মোট ভোটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা যায়।
শহুরে অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে STV চালু করা যেতে পারে।
🟢 গণশিক্ষা ও সচেতনতা:
মাধ্যমিক স্তর থেকেই ছাত্রদের পিআর, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করা দরকার।
🟢 রাজনৈতিক সংলাপ:
নতুন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে পিআর নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
---
🔶 ৪. উন্নত দেশগুলোর রোডম্যাপ থেকে শেখা
নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ের মতো দেশগুলোর পিআর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া খেয়াল করলে দেখা যায়:
তারা জনমত গ্রহণ করেছে (referendum)
ধীরে ধীরে প্রয়োগ করেছে
নির্বাচনী কমিশনকে স্বতন্ত্রভাবে শক্তিশালী করেছে
নাগরিক শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে
বাংলাদেশও চাইলে এই পথে এগোতে পারে।
---
🔶 ৫. রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠেকাতে পিআর?
প্রশ্ন উঠতেই পারে—বাংলাদেশে পিআর চালু হলে কি রাজনীতি আরও জটিল হয়ে যাবে?
উত্তর হলো—না, যদি পরিকল্পনা ও নীতিগত সংহতি থাকে। পিআর রাজনৈতিক আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তোলে, একক কর্তৃত্ব কমায়। এটি সংবিধান, আইন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও মজবুত করতে পারে।
---
🔶 শেষ কথা:
গণতন্ত্র মানেই শুধু ভোট নয়—সকল কণ্ঠস্বরের প্রতিফলন
প্রতিটি ভোট যদি মূল্যবান হয়, তবে প্রতিটি ভোট যেন প্রতিফলিতও হয়। পিআর সিস্টেম আমাদের সামনে সেই পথ খুলে দেয়।
এটি কোনো ম্যাজিক নয়—বরং ধৈর্য, পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার পথ।
---
❓ পাঠকের প্রশ্ন:
আপনি যদি আইনপ্রণেতা হতেন, তাহলে পিআর সিস্টেমের কোন ধরনটি বাংলাদেশে চালুর জন্য বিবেচনা করতেন? এবং কেন? মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না।
Comments
Post a Comment