স্পেশাল পর্ব: পিআর বনাম না ভোট – গণতন্ত্রে ভোটারের শেষ কথা”



🔷 শেষ  পর্ন


🔵 সাবটাইটেল:


পিআর ভোটকে মর্যাদা দেয়, না ভোট ভোটারের মনের প্রতিবাদকে মর্যাদা দেয়। বাংলাদেশ যদি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালু করে, তাহলে কি না ভোটের দরকার থাকবে? কোন দেশে কীভাবে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে, আর আমাদের জন্য এর শিক্ষাই বা কী?



মূল লেখা


১. না ভোটের জন্মকথা: কেন দরকার হলো?


ভোট মানেই পছন্দের প্রার্থী বা দলকে বেছে নেওয়া—এই ধারণা ছিল প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অনেক সময় ভোটার প্রার্থী বা দল কারও প্রতিই আস্থা রাখতে পারে না। তখন ভোটারদের সামনে থাকত দুটি অপশন:


ভোট না দেওয়া


অথবা না চাইলেও কাউকে বেছে নেওয়া



এই অসন্তোষ প্রকাশের জন্য অনেক দেশে শুরু হলো “না ভোট” (NOTA – None of the Above) ব্যবস্থা। এর মূল লক্ষ্য: ভোটারকে প্রতিবাদের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া।


📌 ভারতীয় উদাহরণ:

২০১৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ইভিএমে NOTA বোতাম যোগ করা হয়। আদালত বলেছিল:

“না ভোটের অধিকার গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য, যাতে ভোটাররা স্বচ্ছভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে।”


📌 যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা:

সেখানে অফিসিয়ালি ব্যালটে লেখা থাকে “None of These Candidates”, যা অনেক ভোটার ব্যবহার করেন।


📌 ইউরোপ:

কিছু দেশে ভোটার ব্যালট “ফাঁকা” রাখতে পারে। ফ্রান্স, স্পেনসহ কয়েকটি দেশে এই ব্যবস্থা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।



২. পিআর বনাম না ভোট: সংঘাত নাকি সমন্বয়?


PR (Proportional Representation) ব্যবস্থা ভোট অপচয় রোধ করে। আপনি কোনো দলকে ভোট দিলে, তারা যত ভোট পায় তার আনুপাতিক অংশ সংসদে পায়।

✅ তাই ‘আমার ভোট নষ্ট হলো’—এই মানসিকতা নেই।


তাহলে প্রশ্ন: না ভোটের দরকার আছে কেন?

কারণ ভোট অপচয় না হলেও, যদি তালিকাভুক্ত কোনো দল বা প্রার্থীর ওপর আপনার আস্থা না থাকে, তবে অসন্তোষ প্রকাশের অধিকার আপনার থাকা উচিত। এটাই না ভোটের শক্তি।


📌 কিছু দেশে প্রস্তাব:

PR পদ্ধতির ব্যালটে “Reject All Lists” নামে একটি আলাদা ঘর রাখা। এতে ভোটার পুরো প্রক্রিয়ার প্রতি অসন্তুষ্ট হলে প্রতীকীভাবে তা জানাতে পারে।



৩. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা


দেশ ভোটিং পদ্ধতি না ভোটের অবস্থা


ভারত FPTP + ইভিএম ২০১৩ থেকে NOTA আছে

নেভাডা (USA) FPTP “None of These Candidates”

ফ্রান্স মিক্সড ফাঁকা ভোট স্বীকৃত

রাশিয়া PR + তালিকা আগে ছিল “Against All”, ২০০৬ এ বাতিল

নেপাল PR + FPTP NOTA আনুষ্ঠানিকভাবে নেই

কানাডা (কিছু প্রদেশ) মিক্সড Declined ballot অনুমোদিত




৪. বাংলাদেশে পিআর এলে না ভোটের দরকার হবে কি?


বাংলাদেশে যদি পিআর চালু হয়, তাহলে—

✅ ভোটাররা জানবে তাদের ভোট সংসদে যাবে

✅ বৈচিত্র্যময় তালিকা তৈরি হবে

✅ ছোট দলগুলোরও সংসদে কণ্ঠ থাকবে


তবুও না ভোট জরুরি কেন?


যদি তালিকাভুক্ত সব দলকেই ভোটার প্রত্যাখ্যান করতে চায়


যদি দলগুলো অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়


যদি ভোটার কেবল প্রতিবাদ জানাতে চায়



না ভোট থাকলে দলগুলোর ওপর চাপ বাড়বে—তাদেরকে মানসম্মত তালিকা ও প্রার্থী আনতে বাধ্য করবে।



৫. চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক


✅ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন:

যদি না ভোট সর্বাধিক হয়, তখন কি নির্বাচন বাতিল হবে?

ভারতে বর্তমানে নির্বাচন বাতিল হয় না, NOTA কেবল প্রতীকী প্রতিবাদ। কিন্তু যদি বাংলাদেশে এটি চালু হয়, নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে—


সীমা নির্ধারণ: উদাহরণস্বরূপ, যদি NOTA ৫০% ছাড়ায়, তবে আসন পুনর্নির্বাচন?


দলীয় তালিকা পুনর্গঠন: প্রক্রিয়া কী হবে?




৬. শেষ কথায়: সমন্বয়ের স্বপ্ন


PR ভোটারের ইতিবাচক কণ্ঠ তুলে ধরে—যেখানে প্রতিটি ভোটের মূল্য আছে।

NOTA ভোটারের নেতিবাচক অসন্তোষ প্রকাশ করে—যাতে দলগুলো দায়িত্বশীল হয়।


দুটির সমন্বয়ে গণতন্ত্র হবে আরও শক্তিশালী, কারণ এতে ভোটার শুধু সংখ্যা নয়—বরং মর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে তার পছন্দ ও প্রতিবাদ উভয়ই প্রকাশ করতে পারবে।


📌 ২০৩০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে?

একটি ব্যালটে যদি দেখা যায়:


দলীয় তালিকা


শেষে একটি ঘর: “কাউকেই চাই না”

তাহলে কি তা আরও গণতান্ত্রিক নয়?




❓ পাঠকের প্রশ্ন:


আপনার মতে, বাংলাদেশে যদি পিআর চালু হয়, তাহলে কি না ভোট রাখা উচিত? যদি রাখা হয়, তার ক্ষমতা কতটা হওয়া উচিত—প্রতীকী, নাকি সিদ্ধান্তমূলক?







Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণের নতুন অধ্যায় – জাতিসংঘ অফিসের প্রস্তাব কী নির্দেশ করে।

পিআর চালুর বাস্তব রোডম্যাপ: বাংলাদেশে পরবর্তী ৫ বছরে কীভাবে শুরু করা সম্ভব?”

জুলাই ঘোষণাপত্র: একটি জাতির সংকল্প ও বৈশ্বিক অনুরণন