পিআর ও নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: সুযোগ ও সম্ভাবনার নতুন দরজা”
🔷 পর্ব ৯:
🔵 সাবটাইটেল:
নারী ক্ষমতায়ন কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলে তা ফলপ্রসূ হয় না। পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শুধু একটি কাঠামো নয়—এটি একটি সম্ভাবনার দরজা। এই পর্বে জানুন, কীভাবে পিআর নারীর কণ্ঠস্বর, নেতৃত্ব এবং নীতিনির্ধারণে প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারে।
🔶 ১. বর্তমান পদ্ধতিতে নারীর অবস্থান কতটা দুর্বল?
বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, কিন্তু সরাসরি নির্বাচনে নারীর উপস্থিতি মাত্র ৫–৬% এর মতো। অধিকাংশ বড় দল নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় না বা দেয় নামমাত্র।
✅ সমস্যা:
মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় বৈষম্য
‘জিতে আসতে পারবে না’ ভাবনা
পুরুষতান্ত্রিক দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো
📌 বাস্তবতা: সংরক্ষিত আসন মানেই প্রতিনিয়োগ—প্রতিনিধিত্ব নয়।
🔶 ২. পিআর নারীর জন্য কী সুযোগ তৈরি করে?
পিআর ব্যবস্থায় দলগুলোকে একটি প্রার্থী তালিকা জমা দিতে হয়। এতে কোটার ভিত্তিতে নয়, বরং কাঠামোগতভাবেই নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো সম্ভব।
✅ সুবিধা:
নারীদের 'নির্বাচনযোগ্য' করে তুলে ধরার চাপ কমে
দলীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বেশি
আসনে জেতা না জেতার চাপে নয়, বরং মোট ভোটের অনুপাতে নারীরা পৌঁছান সংসদে
📌 উদাহরণ: সুইডেন, ফিনল্যান্ড, স্পেন—এই দেশগুলোতে পিআর ব্যবস্থায় নারীর সংসদীয় অংশগ্রহণ ৪০–৫০% এর উপরে।
🔶 ৩. শুধু সংখ্যা নয়—নেতৃত্বেও নারী
পিআর শুধু উপস্থিতি নয়, সিদ্ধান্তের স্তরে নারীর অবস্থানও দৃঢ় করে। কারণ এতে দলে প্রার্থী তালিকার উপরের দিকে নারীদের রাখা বাধ্যতামূলক হতে পারে।
✅ প্রস্তাব:
“Zipper System” বা “Alternating Gender List” চালু করা—নারী-পুরুষ একে একে তালিকায় রাখা
📌 উদাহরণ: রুয়ান্ডা পিআর ব্যবস্থায় এই নিয়ম চালু করে সংসদে ৬১% নারী সদস্য অর্জন করেছে—বিশ্বে সর্বোচ্চ।
🔶 ৪. রাজনৈতিক মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারে পিআর
FPTP-তে নারীকে 'দুর্বল' প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়। পিআর সেই মানসিকতা ভেঙে দেয়—কারণ দলীয় তালিকায় নারীকে শুধু জেতার ক্ষমতা নয়, প্রতীকী বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবেও স্থান দেওয়া হয়।
✅ ফলাফল:
নারী-ইস্যু ভিত্তিক আইন পাস সহজ হয়
লিঙ্গভিত্তিক বাজেট বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টি হয়
রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার কমে
🔶 ৫. পিআর চালু হলে নারীর প্রস্তুতি প্রয়োজন
যেহেতু দলীয় ভিত্তিতে তালিকায় আসতে হবে, সেহেতু নারী নেতাদের প্রস্তুত করতে হবে দলীয় কর্মকৌশল, গণযোগাযোগ, নীতিনির্ধারণী আলোচনায়।
✅ প্রস্তাব:
নারী রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেনিং
বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ‘নারী ও রাজনীতি’ বিষয়ক ওয়ার্কশপ
নারী নেতৃত্বে উৎসাহমূলক কোটা পদ্ধতি দলের ভিতরে চালু
🔶 শেষ কথায়:
পিআর শুধু নারীর জন্য আরও ৫০টি সংরক্ষিত আসনের নাম নয়—এটি হতে পারে প্রকৃত নেতৃত্বে অংশগ্রহণের পথ।
যদি আমরা নারীর কণ্ঠস্বরকে সংসদে শক্তিশালী করতে চাই, তবে পিআর পদ্ধতি হতে পারে সেই ন্যায়ভিত্তিক সেতু।
❓ পাঠকের প্রশ্ন:
আপনার মতে, বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের চেয়ে পিআর পদ্ধতি নারীর নেতৃত্ব ও কণ্ঠস্বর আরও বেশি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কি? আপনার অভিমত জানান।
Comments
Post a Comment